Tags
তথ্য প্রযুক্তি এখন মানব জীবনের একটি আবিছেদ্য অংশ। বিশ্বায়নের কল্যাণে উন্নত দেশের খোঁজখবর ঘরে বসেই পাওয়া সম্ভব। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। তবে এই ক্ষেত্রে বাইরের বিশ্ব যেখানে অনেক অগ্রসর, বাংলাদেশ সেখানে অনেকটা পিছিয়ে আছে। ইন্টারনেট প্রযুক্তির ব্যবহারের কারনে এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়ে উঠেছে অনেক সহজ এবং দ্রুততর। ফলশ্রুতিতে ব্যবসা-বানিজ্যের প্রচার ও প্রসার ঘটছে দ্রুত। বর্তমানে বাংলাদেশে যে ডিজিটাল যুগের সূচনা হয়েছে তারই পথ ধরে ই-কমার্স বা ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসা বাণিজ্য আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আমাদের দেশে ই-কমার্সের সূচনা নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে যখন ইন্টারনেট জনসাধারণের হাতে পৌঁছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ই-কমার্স বলতে আমরা কি বুঝি? সহজ ভাষায় এর অর্থ হচ্ছে ইলেকট্রনিক কমার্স। ইন্টারনেটের মাধ্যমে যখন ব্যবসা করা হয় তখন সেটা ই-কমার্স নামে পরিচিত হয়। এটা বিভিন্ন ভাবে গড়ে উঠতে পারে, যেমন: দু’টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে (বি-টু-বি), বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে (বি-টু-জি), বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং ক্রেতার মাঝে (বি-টু-সি), এমনকি ক্রেতা এবং ক্রেতার মাঝেও (সি-টু-সি) এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক হতে পারে।
বাংলাদেশে বি-টু-বি এর প্রচলন সবচেয়ে বেশি। এর কারন হচ্ছে আমাদের গার্মেন্টস সেক্টর। তৈরি পোশাক শিল্পের ক্রেতাগণ সাধারণত ইন্টারনেটের মাধ্যমেই বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং কোম্পানির ওয়েবসাইট থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করে থাকে। উন্নতবিশ্বে বি-টু-সি এবং সি-টু-সি খুবই জনপ্রিয় এবং সহজলভ্য হলেও বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। বর্তমানে কিছু ওয়েবসাইট ইন্টারনেটের মাধ্যমে কেনাবেচার সুবিধাগুলো প্রদান করছে তবে তার পরিসর স্বল্প। এই অনগ্রসরতার কারণ হিসেবে মনে করা হয় আমাদের দুর্বল প্রযুক্তি ব্যবস্থা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে অনগ্রসরতা। এছাড়াও বাংলাদেশের ধীর গতির ইন্টারনেট সার্ভিস এবং আন্তর্জাতিক মানের পেমেন্ট গেটওয়ে না থাকার কারনেও উপরক্ত দুটি সেক্টর প্রসার লাভ করছেনা। কিন্তু এত প্রতিবন্ধকতা সত্তেও আশার আলো হিসেবে ইন্টারনেটে কেনাকাটা বা প্রয়োজনীয় জিনিসের তথ্য খুঁজে বের করা এখন অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
যেসব ক্ষেত্রে আমরা এখন ইন্টারনেটের শরণাপন্ন হচ্ছি তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিল পরিশোধ, হোটেল বুকিং, বিমানের টিকেট বুকিং, অনলাইন ব্যাংকিং, নতুন-পুরাতন দ্রব্যাদি ক্রয়-বিক্রয়, রিয়াল এস্টেট ব্যবসা, গাড়ি বা অন্যান্য যানবাহন ক্রয়-বিক্রয় ইত্যাদি। ঘরে বসেই মানুষ এখন বিভিন্ন সেবার যেমন: গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন ইত্যাদির বিল পরিশোধ করতে পারে। এগুলো সম্ভব হয়েছে মোবাইল ব্যংকিং এর কারনে। এছাড়া সম্প্রতি মোবাইল ব্যংকিং এর মাধ্যমে টাকা পাঠানো জনপ্রিয়তা লাভ করেছে সব শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে। বিভিন্ন শপিংমলে এখন ইলেকট্রনিকালি বিল পরিশোধের ব্যবস্থা আছে। সুপারমার্কেটগুলোতে কার্ড পেমেন্টের ব্যবস্থা থাকায় ক্রেতারা অনেকটা নিশ্চিন্ত মনে বাজার করতে পারেন। উন্নত বিশ্বে মানুষ ঘরে বসেই তাদের নিত্য দিনের বাজার করছে অনায়াসে। ইবে, আমাজন ছাড়াও অনেক প্লাটফর্ম আছে যারা এই সুবিধা গুল প্রদান করে থাকে। আমাদের দেশে অনলাইনে কেনাবেচার জন্য বর্তমানে অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে যেমন: বিপনি, ইবিপনন, আইফেরি, রকমারী, প্রিয়শপ, লামুদি, ক্লিকবিডি, এখনি, উপহারবিডি, কারমুদি, গিফটবিডি, সামগ্রি, বিডিহাট, ইত্যাদি। এই ওয়েবসাইটগুলো থেকে মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বা উপহার সামগ্রী ঘরে বসেই ক্রয় করতে পারে।
উপরে যেসব ওয়েবসাইট গুলো উল্লেখ করা হয়েছে এগুলোর বাইরেও অনেক ওয়েবসাইট আছে যেগুলো একই সুবিধা প্রদান করে থাকে। তবে তুলনামূলক ভাবে এই সেক্টরটি এখনো বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে। আমাদের দেশের ব্যংকিং ব্যবস্থা এখনো আশানুরূপ ভাবে নিরাপদ না। অনেক ব্যংক এখনো অনলাইন ব্যবস্থা চালু করতে পারেনি। সাধারণ মানুষের মাঝে কার্ড ব্যবহারের প্রচলন ও কম। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় যে, অনলাইনে কেনাকাটা যেমন সুবিধাজনক, এর কিছু খারাপ দিক ও আছে। অনেক ক্ষেত্রে পণ্যের গুনাগুণ ঠিক থাকেনা, আবার গ্রাহকের প্রতারিত হওয়ার আশংকাও থাকে। তবে আশার কথা এই যে, নানাবিধ প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অনলাইন কেনাকাটা বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা লাভ করছে। মোবাইল ইন্টারনেট এবং ওয়াই ফাই ইন্টারনেটের প্রসারের কারনে সর্বসাধারণের হাতের নাগালে ইন্টারনেট পৌঁছেছে। এখন প্রয়োজন মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি এবং বিক্রিত দ্রব্যাদির মান নিশ্চিতকরণ। এটা যদি খুব দ্রুত করা সম্ভব হয় তাহলে ই-কমার্সের দুই সেক্টর খুব দ্রুত বিকাশ লাভ করবে বলে আশা করা যায়।
মূল লেখা: বুলবুল আনোয়ার