গত ২ তারিখে মাইক্রসফট এবং নোভেলের মধ্যে চুক্তি হয়েছে উইন্ডোজ এবং লিনাক্স নিয়ে! এটা যেন একই ঘাটে একসাথে বাঘ ও হরিণ পানি খাওয়ার মতো একটি বিষয়। না এটা আমার লিখতে ভুল হয়নি বা আপনি ভুল কিছু পড়ছেন না, দুই মেরূর দু’টি কোম্পানীর মধ্যে এই চুক্তি আইটি বিশ্বে এখন সবচাইতে আলোচিত বিষয়! এক মেরূতে মাইক্রসফট Closed Source অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ বিক্রি করে আসছে এবং অন্য মেরূতে নোভেল Open Source অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্সের সাপোর্ট বিক্রি করছে সেই সাথে নোভেল লিনাক্সের বিভিন্ন সফটওয়্যার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছে বিগত দিনগুলিতে। আর এরকম দু’টি কোম্পানীর মধ্যে ব্যবসায়িক চুক্তি হলে সেটা আলোচনায় আসারই কথা। উক্ত তারিখে মাইক্রসফটের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার স্টিভ বালমের এবং নোভেল-এর এক্সিকিউটিভ অফিসার ও প্রেসিডেন্ট রন হোভসেপিয়ান নিজ নিজ কোম্পানীর পক্ষ থেকে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

চুক্তিকারীরা বলছেন, চুক্তিটি করা হয়েছে মাইক্রসফট এবং নোভেলের সত্ত্বাকে কাজে লাগিয়ে নতুন বাজার তৈরী এবং গ্রাহকদেরকে ভালো পণ্য উপহার দেবার জন্য। চুক্তির স্থায়িত্ব অন্তত ২০১২ সাল পর্যন্ত এবং উভয় কম্পানী চাইলে এর মেয়াদ আরও বাড়াতে পারবে। চুক্তির আওতায় উভয় কোম্পানী উইন্ডোজ এবং লিনাক্সের জন্য mixed platform সফটওয়্যার উন্নয়ন করবে এবং নিজেদের ক্রেতা/ব্যবহারকারীদের অপরের পণ্য সম্পর্কে অবগত করবে। উইন্ডোজ ব্যবহারকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি লিনাক্সে আগ্রহী হয়, তাহলে মাইক্রসফট নির্দিধায় নোভেল লিনাক্সের জন্য পরামর্শ দেবে।

গত ৬ বছরে Open Source কমিউনিটি মাইক্রসফটের পণ্যের উপর ব্যপক প্রভাব ফেলেছে এবং প্রয়োজনে এদের সোর্স নিয়ে মাইক্রসফট কাজ করেছে। যার মধ্যে IronPython, WiX উল্লেখযোগ্য। মাইক্রসফট আবার কিছু Open Source নির্ভর কোম্পানীর সাথে কাজও করেছে যেমন JBoss, SugarCRM, XenSource, Mozilla এবং Zend.

চুক্তির মূল বিষয়গুলি হচ্ছে:

  • প্যাটেন্ট কাভারেজ: এই ক্ষেত্রে এক কোম্পানীর গ্রাহক অন্য কোম্পানীর পণ্য কোনো রকম ভীতি ছাড়াই ব্যবাহার করতে পারবে
  • ভার্চুয়ালাইজেশন: দুই কোম্পানীর চেষ্টা থাকবে অন্যজনের অপারেটিং সিস্টেম ভার্চুয়ালি চালানোর, যেমন উইন্ডোজের ভেতরে লিনাক্স এবং লিনাক্সের ভেতরে উইন্ডোজ। যেহেতু দুই অপারেটিং সিস্টেমই বড় বড় সার্ভার বা ডেটাসেন্টারে ব্যবহৃত হয়, সেহেতু এখন থেকে যাতে হার্ডওয়্যার ও ড্রাইভার নিয়ে যাতে ঝামেলা না হয়, সে বিষয়ে উভয়ে কাজ করবে।
  • ভার্চুয়ালাইজেশন ম্যানেজমেন্ট: উইন্ডোজ থেকে লিনাক্স এবং লিনাক্স থেকে উইন্ডোজ নিয়ন্ত্রনের বিষয়কে উভয়েই উন্নত করবে। কনসোল ভিত্তিক হওয়ার ফলে এর আগে উইন্ডোজ থেকে নানা ভাবে লিনাক্সকে নিয়ন্ত্রন করা গেলেও লিনাক্স থেকে উইন্ডোজের নিয়ন্ত্রনের দৃষ্টান্ত খুবই কম। তাই উক্ত কোম্পানীগুলি এই বিষয়ে এখন থেকে নিজেরাই কাজ করবে।
  • অফিস Open XML: ওপেন অফিস অনেক আগে থেকে Open XML ব্যবহার করে আসছে ডকুমেন্ট সংরক্ষণের জন্য, সেই সাথে মাইক্রসফট অফিস ২০০৭ থেকে যোগ হলো Open XML-এর ব্যবহার। এখন উভয় কোম্পানী নিজেদের বাজারজাতকৃত অফিসের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্লাগ-ইন উন্নয়ন করবে।
  • ফ্রেমওয়ার্ক কোলাবোরেশন: এটি চুক্তির সবচাইতে বিশেষ দিক। একজনের উন্নয়নকৃত সফটওয়্যার যাতে অন্যজনের প্লাটফর্মে চলে, তা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করবে উভয় কোম্পানী।
  • মনো, ওপেনঅফিস এবং সাম্বা: ১ নং চুক্তির আওতায় উভয় কোম্পানীর ব্যবহারকারীরা মনো, ওপেনঅফিস এবং সাম্বা সহ .NET এবং উইন্ডোজ সার্ভার সম্পর্কে সাহায্য সহযোগিতা পাবে।

এই চুক্তির ফলে দুই কোম্পানী ২০১০ সালের মধ্যে বাজার থেকে ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করার আশা করছে। সেই সাথে তারা দাবী করছে যে এই চুক্তি লিনাক্স ও উইন্ডোজের মধ্যেকার বাঁধ ভেঙ্গেছে যার আওয়ার সারা বিশ্বের প্রযুক্তিপ্রেমীরা শুনবে। অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছে যে এই চুক্তির বাস্তবায়ন হলে GPL লাইসেন্স লংঘন করা হবে এবং সাধারন লিনাক্স ব্যবহারকারীরা হঠাৎ করেই একটা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে পারে। এরকম হলে বিশ্ব বাজারে লিনাক্স অচিরেই মুখ থুবড়ে পড়বে।