অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ৮ এরই মধ্যে বহুল আলোচিত। এই অপারেটিং সিস্টেমে মাইক্রোসফট অনেক কিছু ভালো করেছে আবার অনেক কিছুতে হতাশ করেছে ব্যবহারকারীদের। চীরচেনা ডেস্কটপ ইন্টারফেস বাদ দিয়ে চলে এসেছে মাইক্রোসফট ইউআই-তে (যা মেট্রো নামে বেশী পরিচিত), যেটা অনেক ব্যবহারকারী সহজভাবে নিচ্ছেনা। অনেকে বলছে, “দেখতে সুন্দর হতে পারে, রঙ বেশী হতে পারে, কিন্তু উইন্ডোজ ৩.১ এরকমই ছিলো!” ১৯৯৫ সাল থেকে চীরচেনা ডেস্কটপ বাদ দিয়ে ট্যাবলেটের বাজারে পাল্লা দিতেই এই পরিবর্তন বলে ধরে নেয়ে হয়েছিলো।

সত্যি কথা বলতে, এখন লিনাক্স সহ অনেক আধুনিক অপারেটিং সিস্টেম বাজারে এসেছে যাদের ইন্টারফেইস অনেক উদ্ভাবনী এবং ব্যবহারে সুবিধা। যেমন নোম ৩, একসাথে একাধিক ডেস্কটপে অনেকগুলি কাজ করার (মাল্টিটাস্কিং) জন্য এই ডেস্কটপের জুড়ি নাই! আবার নোমের ধারাবাহিকতার সাথে মিল রেখে এবং একটু ম্যাকের ফিল নিয়ে উবুন্টু এনেছে উইনিটি। সবগুলি একটা আরেকটার সাথে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছে। সেই তুলনায় সত্যই ১৯৯৫ সালের ডেস্কটপ ও স্টার্ট মেন্যু এখন পুরাতন, আর তাই হয়তো এই পরিবর্তন!

গতবছর যখন প্রথম উইন্ডোজ ৮ উপস্থাপন করা হলো বিল্ড কনফারেন্সে, তখন বলা হয়েছিলো যে বর্তমান বাজারে উপলব্ধ ট্যবলেটগুলি শুধু কন্টেন্ট উপভোগ (consume) করতে দেয়, সেখানে কন্টেন্ট তৈরী (create) করা যায়না। উইন্ডোজ ৮ এমন একটা অপারেটিং সিস্টেম হবে যা একই সাথে ট্যাবলেট ও ডেস্কটপে চলবে, যেখানে কন্টেন্ট তৈরী ও উপভোগ দু’টি একইসাথে করা যাবে। যারা বিল্ডের কী-নোট দেখেছেন, তারা বলতে পারবেন, আর কেউ আগ্রহী হলে আগের লিঙ্ক থেকে দেখে নিতে পারেন। মাইক্রোসফট অনেক জোর দিয়ে বলেছিলো যে একই অপারেটিং সিস্টেম x86,x64 এবং ARM প্রোসেসরে চলবে! সাথে কিছু ডেমো দেখিয়েছিলো। যদিও আমরা যাচাই করিনি আর তারাও দেখায়নি পেছনে প্রসেসরের আর্কিটেকচার কি ছিলো!!

যাই হোক, শেষ পর্যন্ত কিন্তু মাইক্রোসফট সেই কথা আর রাখতে পারেনি, ট্যবলেট ও ডেস্কটপের জন্য তৈরী করতে হয়েছে আলাদা আলাদা উইন্ডোজ ৮। সেই সাথে ডেভলপারদের আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে উইন্ডোজ ৮-এর এপ্লিকেশন তৈরী করার জন্য।

কিন্তু যেখানে লক্ষাধিক সফটওয়্যার আছে উইন্ডোজ প্ল্যাটফর্মের জন্য, সেখানে ডেস্কটপ বা স্টার্ট মেন্যু না থাকাটা ব্যবহারকারীদের কাছে হতাশার। কিছুদিন আগেও বাজারে বেশ কিছু এপ্লিকেশন ছিলো যা উইন্ডোজ ৮-কে সরাসরি ডেস্কটপে বুট করতে দিতো বা পুরাতন স্টার্ট মেন্যু ফিরে পেতে সাহায্য করতো। কিন্তু নতুন নতুন পরীক্ষামূলক সংস্করণে মাইক্রোসফট এই ফিচারগুলি বন্ধ করে দিয়েছে।

এখন জানা গিয়েছে উইন্ডোজ ৮ আরটিএম (সর্বশেষ সংষ্করণ যা ব্যবহারকারীদের কাছে বিক্রি করার জন্য ছাড়া হবে)-এ আর সরাসরি ডেস্কটপ ব্যবহার করার উপায় থাকছেনা। আগে উইন্ডোজ ৮ স্টার্ট মেন্যুতে ডেস্কটপের একটা সর্টকাট থাকলেও সেটা আর থাকবে না। সেইসাথে গ্রুপ পলেসি সম্পাদন করে সরাসরি ডেস্কটপে যাওয়ার ব্যবস্থা করে নিতে পারতেন ডোমেইন এডমিনিস্ট্রেটর এবং ব্যবহারকারীরা, সেটাও আর করতে দেবেনা মাইক্রোসফট। যদি কারও ডেস্কটপ দেখতে ইচ্ছা হয়, তাহলে কী-বোর্ডে Windows Key+D চাপ দিয়ে ডেস্কটপে যেতে হবে, বা কোনো এপ্লিকেশন যদি ডেস্কটপ ভিত্তিক হয়, তাহলে সেটাও ডেস্কটপে গিয়ে আরম্ভ হবে।

এই মুহূর্তে বিষয়টি আমি ব্যবহার করিনি, তাই সরাসরি মন্তব্য করছিনা, তবে আমি একটু হলেও ভয় পাচ্ছি মাইক্রোসফটের এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে। তারা নিজেরই অফিস ২০১৩ ডেস্কটপের জন্য বের করছে, আবার হাজার হাজার এপ্লিকেশন আছে যেগুলি ডেস্কটপে চলে। এবং নতুন প্ল্যাটফর্মে আনতে হলে ১-৪ বছর সময় লেগে যেতে পারে। সেই সাথে আছে কর্পোরেট এপ্লিকেশন, যেগুলি এত সহজে পরিবর্তন করা সম্ভব না। এতদিন হয়ে গেলো, গ্রামীণফোন তাদের এপ্লিকেশন কম্পেটিবিলিটি ইস্যুর জন্য এখনো এক্সপি ব্যবহার করে বলে আমি জানি।

বিগত কয়েকবছর মাইক্রোসফট উদ্ভাবনী কিছু করার চেষ্টা করেছে এবং ব্যবপক প্রচারও করেছে কিন্তু শুরু থেকেই মনে হয়েছিলো, পাবলিক এগুলি খাবেনা। যেমন: সিলভারলাইট, সিলভারলাইট ভিত্তিক উইন্ডোজ ফোন ৭। এখন উইন্ডোজ ৮ নিয়েও অনেকটা চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে মাইক্রোসফট।

যারা উইন্ডোজ ৮-এ স্টার্ট মেন্যু পেতে চান, তারা স্টার্ট ৮ এপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে পারেন। অনেকে বলছে এটা আগামী প্রকাশনার সাথেও কাজ করবে।