১. মাইক্রোসফট উইন্ডোস মিলেনিয়াম এডিশন: উইন্ডোস মিলেনিয়াম এডিশন বা সংক্ষেপে ME-কে অনেকে Mistake Edition বলে থাকেন। যার অর্থ এই যে, মাইক্রোসফট ভূল করে উইন্ডোসের এই সংস্করণ বাজারজাত করেছিলো। ২০০০ সালের শেষ দিকে হোম ইউজাররা যখন উইন্ডোস ৯৮ ২য় সংস্করণ ব্যবহার করছে, ঠিক সেই সময় ঐ ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে মাইক্রোসফট ME নামের উইন্ডোজ বাজারে নিয়ে আসে। বাজারে আসার পর-পরই ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অভিযোগ করতে থাকেন। যেমন: ইনস্টলের সময় ঝামেলা হচ্ছে, বিভিন্ন হার্ডওয়্যার বা সফটওয়্যার কাজ করছেনা এবং সর্বোপরি এটা কাজই করছে না। এই উইন্ডোজে মাইক্রোসফট প্রথমবারের মত সিস্টেম রি-স্টোর নামের একটি সুবিধা প্রদান করে, যার ফলে আপনার সিস্টেমের সমস্যা হলে আপনি আগের ভালো অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবেন, কিন্তু ফল স্বরূপ আপনি সেই চেষ্টা করতে গেলে এই সুবিধাটি আপনার সিস্টেমের অন্যান্য সমস্যা যেগুলি আপনি কাটিয়ে উঠেছিলেন, সেগুলি হাজির করতো। এবং মাইক্রোসফট কখনই মুখ খুলেনি যে বিশ্বজুড়ে উক্ত অপারেটিং সিস্টেমের কতগুলি ব্যবহারকারী আছে।

২. রিয়েল প্লেয়ার: ১৯৯৯ সালে এই প্লেয়ার যাত্র শুরু করে এবং যেই ওয়েব সাইটগুলি রিয়েল প্লেয়ারের মদদ নিয়ে কন্টেন্ট তৈরী করে, সেগুলি ভ্রমণ করার সময় আপনি এরকম তথ্য দেখে হতাশ হবেন না, “আপনার ব্রাউজার কর্তৃক এই সাইট প্রদর্শিত হবার জন্য আপনাকে অবশ্যই নতুন সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে হবে… অনুগ্রহ করে একটু অপেক্ষা করুন… দুঃখিত আপনার প্রয়োজনীয় কোডেকটি পাওয়া যায়নি…. অনুগ্রহ করে নিজে নিজে সিস্টেম আপগ্রেড করার চেষ্টা করুন বা আপনার এ্যডমিনের সাথে যোগাযোগ করুন… রিয়েলের সলিউশন ব্যবহার করে এমন একটি সাইট http://www.cnn.com, এই সাইটে গেলে আপনি এরকম তথ্য অহরহ দেখবেন। ১৯৯৯ সালে রিয়েল বের করে রিয়েল জ্যুকবক্স যা কি-না একটি স্পাইওয়্যারের মত আপনার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল ঠিকানা, আপনি সাধারণত কি ধরণের গান শুনছেন ইত্যাদী তথ্য কোম্পানীর সার্ভারে পাচার করে এবং ব্যবহারকারীরা স্প্যাম মেইল পেতে থাকেন। শুধু স্প্যাম পাঠিয়েই খান্ত হননি, ব্যবহারকারীদের ফোন নম্বর পেয়ে, তাঁদের ফোন করে পর্যন্ত উত্তক্ত করেছে সেই সময়। পরে রিয়েল প্লেয়ার জি-২ নামের একটি নতুন ভার্সন ছাড়লেও কোম্পানী অভ্যাসের পরিবর্তন করেনি। অনেকে উক্ত বিষয় নিয়ে আপত্তি জানালে বাধ্য হয়ে একটি প্যাচ ছাড়ে এবং এই অভ্যাস পরিত্যাগ করে। কিন্তু একটি কথা স্বীকার করতে অসুবিধা নেই যে রিয়েল বিনামূল্যে মিডিয়া প্লেয়ার সরবরাহের অভ্যেস চালু করেছিলো এবং সেটাই মাইক্রোসফটের মিডিয়া প্লেয়ারের একমাত্র প্রতিদ্বন্দী ছিলো। রিয়েলের উক্ত খোঁটা পলেসির কারনেই হয়তো প্লেয়ারটি ব্যবহারকারীদের কাছে কখনোই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি।

৩. মাইক্রোসফট ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৬:
২০০১ সালে মাইক্রোসফট ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের এই নতুন সংষ্করণটি বাজারে নিয়ে আসে এবং বরাবরের মতই বিনামূল্যে বিতরন করে। সুবিধা দিয়ে ভরা, ব্যবহারে সহজ এই ইন্টারনেট ব্রাউজারের আসল রূপ কিন্তু সেরকম ছিলোনা। পৃথিবীতে হয়তো এটাই প্রথম একটি পণ্য যার মধ্যে নিরাপত্তার “ন” ছিলোনা। যার ফলে এই ব্রাউজার নিয়ে সাইট ভ্রমণ করতে গেলে দেখা যেতো যে ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে কী-লগার, স্কুব ঢুকে পড়েছে, যা যে-কোনো সময় ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয় তথ্য চুরি করে পাচার করতে পারে। এর পরে মাইক্রোসফট অনেক সিকিউরিটি প্যাচ বা আপডেট ছাড়লেও ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার নামটি চীরদিনের মতো বিদায় নেয় এবং সেই বাজার ধরে ফেলে মোজিলা ফায়ারফক্স।

৪. সিনক্রোন সফট RAM: ১৯৯৫ সালে যখন ৩০ থেকে ৫০ মার্কিন ডলার দিয়ে এক মেগাবাইট RAM কিনতে হতো এবং উইন্ডোজ ৯৫ RAM এর জন্য ক্ষুধার্থ ছিলো, তখন এই পন্যটি বাজারে আসে। নির্মাতারা দাবী করেন যে ৩০ মার্কিন ডলার দিয়ে এই সফটওয়্যারটি কিনলে আপনার সিস্টেমের মেমরী দ্বিগুন হয়ে যাবে এবং বিশ্বজুড়ে সাত লক্ষ্য ব্যবহারকারী এটা ভেবেই সফটওয়্যারটি কিনেছিলেন। পরে সবাই জানতে পারে যে এই অখাদ্য সফটওয়্যারটি হার্ডডিস্কে উইন্ডোজের ক্যাশ বাড়ানো ছাড়া কিছুই করেনা এবং ১৯৯৯ সালে মামলা খেয়ে টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য হয় সিনক্রোন।

৫. মাইক্রোসফট বব্‌: ১৯৯৫ সালে হোম ইউজার এবং বাচ্চাদের কথা মনে করে এই সফটওয়্যারটি বাজারে আসে। মাইক্রোসফট বলেছিলো এটা উইন্ডোজের কাজিন এবং উন্ডোজ ৩.১ ব্যবহারকারীদের কাছে এটা উইন্ডোসের পুরাতন চেহারার পরিবর্তন ছাড়া কিছুই ছিলোনা। বব্ একটি বাসঘর হিসেবে ডেস্কটপকে উপস্থাপন করতো, যা ক্লিক্ করার মতো বস্তু দিয়ে ভরা ছিলো। কিন্তু সবচাইতে বিরক্তিকর ছিলো ববের জবাব দেয়ার চাইতে প্রশ্ন করার প্রবনতা। শুরুতে মাইক্রোসফট বিভিন্ন পণ্যের সাথে এটা’র ডেমো ভার্স বিনামূল্যে বিতরণ করে এবং কিন্তু সেই ডেমো চালিয়েই কেউ এটার মূল সংস্করন কিনতে আগ্রহী হয়নি। আর অন্যদিকে ব্যবহারকারীরা সেই সময়ই উইন্ডোজ ৯৫ হাতে পেয়ে গেলে বব্-এর কোনো চাহিদাই তৈরী হয়নি গ্রাহকদের কাছে।

৬. আই বি এম ডেস্কস্টার ৭৫জি এক্স পি হার্ডডিস্ক: ২০০০ সালে আই বি এম ৭৫ গিগাবাইট ক্ষমতা সম্পন্ন এই হার্ডডিস্কটি বাজারে নিয়ে আসে এই বলে যে এটা দ্রুত কাজ করবে এবং এর উপরে আপনি অনায়াসে ভরসা রাখতে পারবেন। হার্ডডিস্কে আপনার ডাটা এমনভাবে থাকবে, যেমন মায়ের কোলো শিশু। বাজারে আসার কিছুদিনপরেই ব্যবহারকারীরা ডেস্কস্টার নাম পাল্টে ডেথ্‌স্টার নাম দেয়। কারন কোনো কারন ছাড়াই হঠাৎ কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া, আপনার ডাটা হারিয়ে যাওয়া ছিলো এর অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য। ২০০১ সালের প্রথমদিকে গ্রাহকরা এই অভিযোগ করলে আই বি এম কোনো দ্বায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে, কিন্তু পরে আইনি চাপে পড়ে সকল ব্যবহারকারীদের ১০০ মার্কিন ডলার ফেরৎ দিতে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য যে, সেই সময় এটাই ছিলো বৃহত্তমম ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হার্ডডিস্ক।

৭. আয়োমেগা জিপ্ ড্রাইভ: ১৯৯৮ সালে বিশাল বিশাল ডাটা ব্যাকআপ রাখার জন্য বাজারে আসে এই পন্যটি। আসার পরেই চুটিয়ে ব্যবসা করে এবং বলতে গেলে এটি ছিলো ব্যবসাসফল একটি পণ্য। ব্যাংক, বীমা, আইটি ফার্ম সহ অনেক প্রতিষ্ঠান এই পণ্যের গ্রাহক হন নিমিশেই। কারন সেই সময় ফ্লপি বা টেপ ড্রাইভের বিকল্প কিছুই ছিলো না। কিন্তু বাস্তব ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেখা যায় কিট্ কিট্ শব্দ করে ডিস্কগুলি কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং ব্যবহারকারীদের সমস্থ ডাটা হারিয়ে যায় নিমিশে। এর পরে আয়োমেগা জ্যাজ ড্রাইভ নামে আরেকটি পন্য বাজারে আনে, কিন্তু আগেরটির কথা চিন্তা করে আর কেউ নতুন করে এটি ব্যবহারের ঝুঁকি নেননি। এবং পুরাতন ক্ষিপ্ত ব্যবহারকারীদের চাপের মুখে তিন বছর আইনি লড়াই চালানোর পরে কোম্পানী টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য হয় ব্যবহারকারীদের।

৮. ওয়েব টিভি: ১৯৯৫ সালে বাজারে আসে ওয়েব টিভি। এটা একধরনের রিসিভার যা দিয়ে টিভির সাথে সংযুক্ত করে আপনি ইন্টারনেটের যাবতীয় কাজ করতে পারবেন বলে দাবী করেছিলো নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ব্যবহার করতে গেলে দেখাযায় যে এই সিস্টেমটি ওয়েবের বেশীরভাগ ফরম্যাট সাপোর্ট করেনা, কিউক টাইম, রিয়েল প্লেয়ারের মত মিডিয়া ফাইল চলে না, স্বাভাবিক ব্রাউজারে আমরা যেরকম পেজ দেখি, ওয়েব টিভিতে সেরকম দেখা যায় না। রিমোট কি-বোর্ডটির ডিজাইন ব্যবহারে সুবিধাজনক না, ইত্যদী করনে পন্যটি বাজার পায়নি। তবে এর ব্যবহারকারীরা কোনো মোকদ্দমা করেনি। 

৯. আইটপ চশমা ডিভিডি প্লেয়ার: মিশন ইম্পোসিবল্ ২ ছবির শুরুতে নিশ্চয়ই দেখেছেন যে এ্যথেন হান্টকে চশমার মাধ্যমে একটি বার্তা পাঠানো হয় এবং বার্তা দেখার পরে সেটা সয়ংক্রিয়ভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ইলেকট্রনিক গ্যাজেট্-এর প্রতি মানুষের একটা দুর্বলতা আছে আর সেটারই সুযোগ নিয়ে আইটপ বাজারে এনেছিলো চশমার মধ্যে ডিভিডি প্লেয়ার। এটি একটি চশমার ডান চোখে ১৪ ইঞ্চি মনিটরের মত ছবি দেখাতো এবং আপনার বাম চোখ ফাঁকা থেকে যেতো। সাথে ছিলো ডিভিডি ড্রাইভ, হেডফোন, ব্যাটারী প্যাক এবং এত সব ঝামেলার জন্যই মনেহয় এই পন্য মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়নি। একচোখে আর কি দেখবে!!! তাই হতাশাজনক এই পণ্যটি তেমন কেউই কেনেনি।

১০. সার্প আর ডি থ্রি ডি নোটবুক কম্পিউটার: ২০০৪ সালে এই পন্যটি বাজারে আনে এবং এর দাবী ছিলো যে আপনি স্টেরিও চশমা ছাড়াই অনায়াসে থিডি’র সমস্থ মজা উপভোগ করতে পারবেন। কিন্তু যখনই আপনি থ্রিডি চালু করার বোতামটি টিপবেন, কম্পিউটারটির গতি অবিশ্বাস্য রকমের কমে যায় বা পর্দার ছবিই হারিয়ে যায় মাঝে মাঝে। তাই এই নোটবুকটি দুর্দান্ত রকমের বাজার হারায় এবং পরে সার্প রিফারবিস্ট হিসাবেও সেগুলি মানুষের কাছে বিক্রি করতে পারেনি।

১১. আমেরিকা অনলাইন: ১৯৮৯ সালে যাত্রা শুরু করে ২০০৬ সালে এসে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এই অনলাইন সার্ভিস। ১৯৮৯ সালে কোয়ান্টাম পিসি লিঙ্ক নামের একটি বিবিএস সার্ভিসের সাথে হাত মিলিয়ে আমেরিকা অনলাইনের যাত্র শুরু হয়। এক ঢিপ অব্যবহার যোগ্য সফটওয়্যার, অপ্রবেশ্য ডায়েল-আপ নম্বর, লোভী মার্কেটিং পলেসি, মুখের উপরে বিজ্ঞাপন, বাজে কাস্টমার সার্ভিস, প্রশ্নযোগ্য মতো বিলিং সিস্টেম, অসীম স্প্যাম মেইল সব মিলিয়ে ব্যবহারকারীদের হতাশ করা ছাড়া এই সার্ভিস আর কিছু করেনি। নিজেদের বিশ্বের সর্ববৃহৎ ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বলে দাবী করলেও কখনো তারা স্বীকার করেননি যে এই ব্যবহারকারীদের মধ্যে শতকরা কতজন আমেরিকা অনলাইন কর্তৃক প্রদত্ত বিজ্ঞাপন বাবদ দেয়া ফ্রি সময়গুলি ব্যবহার করে হারিয়ে যেতো। বর্তমানে এই কোম্পানী অনলাইন সেবা বাদ দিয়ে কন্টেন্ট প্রোভাইডারের ব্যবসা করছে এবং ঘন ঘন নীতি বদলের জন্য গত ২০০৫ সালের আগষ্ট মাসে একবার মামলায় জড়িয়ে ১.২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানাও দিয়েছে এই কোম্পানী।