কথা শুরু করার আগে বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর থেকে নেয়া দু’টি খবর শেয়ার করি:

সাবমেরিন কেবল বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য বিটিটিবি-ই দায়ী

বারবার সাবমেরিন কেবল বিচ্ছিন্ন হয়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার জন্য বিটিটিবির অদক্ষতাকে দায়ী করেছেন সফটওয়্যার ব্যবসায়ী ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, হরতালের কারণে প্রতিদিন যে পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হতো এতে তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হচ্ছে। সরকারের কাছে বিটিটিবির সাবমেরিন কেবলের বিকল্প ব্যবস্থা রাখার দাবি করেছেন তারা।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ যৌথ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বেসিসের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, “২০০৬ সালের মে মাসে সাবমেরিন কেবল স্থাপনের পর দেশে ইন্টারনেট সেবার মান উন্নত হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে- এটাই আশা করেছিলাম। অথচ চালু হওয়ার পর থেকে ২৭ বার সাবমেরিন কেবলের কারণে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। যার ফলে দেশের আইটি সেক্টর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে আমাদের অর্থনীতির ওপর।” সাবমেরিন কেবল বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার জন্য বিটিটিবিকে দায়ী করে তিনি বলেন, “তাদের অযোগ্যতাই এক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে বলে আমরা মনে করি।”

সরকারের কাছে সাবমেরিন কেবলের বিকল্প ব্যবস্থা রাখার দাবি জানান রফিকুল ইসলাম। দেশে বেসরকারি সংস্থার কাছেও সাবমেরিন কেবল সংযোগ থাকার কথা উল্লেখ করে এজন্য প্রয়োজনে তাদের কাছ থেকে তা লীজ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। বেসিস সভাপতি জানান, সাবমেরিন কেবল বিচ্ছিন্ন থাকলে একদিনেই তথ্য প্রযুক্তি খাতে আড়াই লাখ ডলার ক্ষতি হয়।

আরেকটি খবর:

অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল বারবার কাটা পড়ায় হুমকির মুখে রপ্তানি বাণিজ্য

অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সংযোগ বারবার বিচ্ছিন্ন হওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে প্রায় ৯৫০ কোটি ডলারের রপ্তানি বাণিজ্য। রপ্তানির অনেক অর্ডার বাতিল হওয়ার পাশাপাশি তা চলে যাচ্ছে অন্য দেশে। বিটিটিবি জানিয়েছে, ২০০৬ সালের ২১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত ৪৩৭ কিলোমিটারের অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল এ যাবৎ ২২ বার কাটা পড়ে। এরমধ্যে নাশকতামূলকভাবে আটবার এবং অবকাঠামো উন্নয়নের সময় অসাবধানতা, ভূমিধস, চুরি ও যানবাহনের দুর্ঘটনার কারণে বাকি সময়গুলোতে লাইন কাটা পড়েছে।

অবশ্য মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বোসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএএস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ যৌথ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, উদ্বোধনের পর এ পর্যন্ত মোট ২৭ বার কাটা পড়েছে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল। সর্বশেষ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৫টার দিকে কক্সবাজারে নাশকাতমূলকভাবে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল কেটে ফেলা হয়। এর আগে রাত ১ টায় সীতাকুণ্ডের তিনটি স্থানে ক্যাবল কেটে ফেলা হয়।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নেতারা জানান, গত অর্থবছরে এ খাত থেকে মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৯২০ কোটি ডলার। অন্যদিকে, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের হিসেবে সফওয়্যার খাতে বাৎসরিক রপ্তানির হয় তিন কোটি ডলার। এ দুটি খাতের সঙ্গে বৈদেশিক যোগাযোগ মূলত ইন্টারনেট নির্ভর। কিন্তু বারবার ইন্টারনেট সংযোগ বিঘ্নিত হওয়ায় এ দুই খাতের রপ্তানি হুমকির মুখে পড়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন বিদেশের সঙ্গে প্রায় সব ধরনের যোগাযোগ ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়। এক্ষেত্রে যে কোনো ধরনের বিঘ্ন আমাদের ইমেজের ক্ষতি করছে। এ কারণে অনেক কাজের অর্ডার বাতিল হয়ে সেগুলো অন্য দেশে চলে যাচ্ছে।” তিনি জানান, অনেক কাজের জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিডিং এ অংশ নিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে মাত্র কয়েক ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল বারবার কাটা পড়ায় অনেক বিডিংয়ে অংশ নেওয়া যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম রাওলি বলেন, “২০০৬ সালের পর ২৭ বার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবলের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে দেশের আইটি সেক্টরে রপ্তানি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর প্রভাব অর্থনীতির উপরও পড়ছে।” অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল বারবার বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য বিটিটিবিকে দায়ী করে তিনি বলেন, “তাদের অযোগ্যতাই এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছে বলে আমরা মনে করি।”

অবশ্য বিটিটিবির মহা ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়া সফদার বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমকে এমন অবিয্গো এড়িয়ে গিয়ে বলেন, “সম্ভবত ব্যবসায়ীক স্বার্থে কোনো অশুভ মহল বারবার এটা করছে। এ কারণে অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি হচ্ছে।” সমস্যা দূর করতে নেওয়া সরকারি প্রচেষ্টার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এ নিয়ে কাজ করছে। দ্রুত তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অস্ত্রধারী আনসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সাধারণ নিরাপত্তা কর্মীও রয়েছে। আশা করছি দৃর্বৃত্তরা অচিরেই ধরা পড়বে।”

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের সহায়তায় বিকল্প ফাইবার ক্যাবল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান। জিয়া সফদার বলেন, “বিকল্প সংযোগটি চালু হলে হুমকি অনেক কমে আসবে। এছাড়া মাইক্রোওয়েভ সংযোগের ক্ষমতাও বাড়ানো হচ্ছে।

বর্তমানে বিটিটিবির ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার।

এখন কথা হচ্ছে বার বার এরকম হবার করণ কি?
আমরা অনেকেই জানি যে কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত যে অপটিক্যাল ফাইবারটি আছে সেটার কাজ আগে দেয়া হয়েছিলো বিদেশী এক কোম্পানীকে এবং শর্ত ছিলো রাস্তার পাশে, মাটি থেকে ৫ ফুট নীচে এই তার অবস্থান করবে। কিন্তু বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে দেশের কোনো এক কোম্পানীকে কাজ দেয়া হয় এবং এরা দায়সারা একটা কাজ করে দেয়। ৫ ফুট তো দুরের কথা মাটি থেকে ৩ ফুট নীচে কেবল আছে কি-না সন্ধেহ। আমার তো মনেহয় বিভিন্ন স্থানে মাটির উপরেই তার পড়ে আছে, আর সেগুলই কেটে যাচ্ছে বার বার। যেটাই হয়েছে, হয়েছেতো নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে এবং এর সাথে জড়িত আছে ব্যবসায়ী মহল।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে এখনো এই ইন্টারনেট বিতরণ কোনো দুর্নীতির বাহিরে আসতে পারেনি। সম্প্রতি বিটিআরসি একটি নতুন আইন কার্যকর করতে যাচ্ছে, আর সেটা হয়ে গেলে আমরা কেউ আর V-Sat-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবো না। আর বিটিটিবির যখন মন চাইবে তখন লাইন দেবে, যখন মন চাইবে লাইন বন্ধ করে দেবে। প্রথম প্রশ্ন হলো যারা কোটি কোটি টাকা খরচ করে এই V-Sat কিনে বসিয়েছে, তাদের ক্ষতিপূরণ কে দিবে? যারা এই তথাকথিত দামী সরঞ্জাম বিক্রি করে মাল বানিয়েছে তারা তো ধরা ছোঁয়ার বাহিরেই থেকে যাবে।

বিটিটিবির যে মালামাল (backbone) আছে, আমার বিশ্বাস সেটা বিশ্বমানের এবং বাংলাদেশের অন্যান্য টেলিকম কোম্পানীগুলি থেকে অনেক উন্নত। একটা কথা আমাদের সবারই বোধগম্য যে গ্রামীণফোন, সিটিসেল যদি তাদের যে-কোনো টাওয়ার থেকে সমমানের ডেটা সার্ভিস দিতে পারে, তাহলে এরা পারেনা কেনো? কক্সবাজারে যেখানে এসে এই ক্যাবল লেগেছে সখান থেকে কাছাকাছি বিটিটিবি’র মাইক্রোওয়েভ টাওয়ারে সংযোগ দিয়ে দিলেও তো ল্যাটা চুকে যায়। সেটার ডেটা ট্রান্সফারের গতি যদি এত বেশী না হয় তাহলোও তো সমস্যা নেই। আমাদের মূল তারের উপরে যখন তথাকথিত নাশকতা মূলক হামলা হবে, তখন আমরা মাইক্রোওয়েভে চলে যাবো। গতি কিছুটা কমে গেলেও অন্ধকারে তো আর বসে থাকতে হবে না।

মোট কথা হলো, আমাদের দেশে কনজিউমার এক্ট বলে কোনো আইন নেই, আর সেজন্যই যার যা খুশি তা করতে পারে, যেমন খুশি তেমনি সেবা দিতে পারে। কালকে যদি ফোন কোম্পানীগুলি বলে আমরা ১০০ টাকা মিনিট বিল নেবো, আমাদের কিছু করার নাই।