বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে লটারির মাধ্যমে ভাগ্যবান বিজয়ীদের সুযোগ দেয়া হয় আমেরিকার নাগরিকত্ব। বছর ঘুরে আবার শুরু হয়েছে আমেরিকা যাবার ২০০৯ সালের ডিভি লটারি কার্যক্রম। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ‘ডাইভারসিটি ভিসা ২০০৯’ ঘোষণা করেছে। এবার ভারত, পাকিস্তানসহ অনেক দেশ এই ভিসা কর্মসূচী থেকে বাদ পড়লেও বাংলাদেশকে এই তালিকায় রাখা হয়েছে। যারা লটারিতে অংশ নিতে চান, তাদের ইন্টারনেটে থাকা নির্দিষ্ট আবেদপত্র পূরণ করতে হবে। সঙ্গে দিতে হবে ছবি। সেটিও রাখতে হবে ইন্টারনেটেই।৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা থেকে আবেদনপত্র জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। চলবে ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা পর্যন্ত। এই সময়ের পর আর আবেদন গ্রহণ করা হবে না। হাতে লেখা কোনো আবেদনপত্রও গ্রহণ করা হবে না। তবে আবেদন করার জন্য শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা না করাই ভালো। কারণ শেষ দিকে সার্ভারে বেশি চাপ পড়ায় আবেদনপত্র পাঠানোর প্রক্রিয়া ধীরগতির হতে পারে।

ডিভি ২০০৯ লটারিতে আবেদনপত্র পাঠানোর একটিই মাত্র পথ রয়েছে। আবেদনকারীকে অবশ্যই ইলেকট্রনিক ডাইভারসিটি ভিসা আবেদনপত্র জমা দিতে হবে, যা পাওয়া যাবে http://dvlottery.state.gov ঠিকানায়। তবে সব তথ্য সম্পূর্ণ ও সঠিক না হলে আবেদনপত্র বাতিল হয়ে যাবে।

আবেদনপত্রে যা দিতে হবে:
পুরো নাম: নামের শেষাংশ/পারিবারিক নাম, প্রথম অংশ, মাঝের অংশ।
জন্মতারখি: দিন, মাস, বছর।
লিঙ্গ: পুরুষ/নারী।
জন্মস্থান: কোন শহরে জন্ম হয়েছে। আবেদনকারী যে দেশে জন্ম গ্রহণ করেছে। যে যোগ্য ভৌগোলিক অঞ্চলের দেশের বাসিন্দা তার নাম।
সঠিক ছবি: ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবি অবশ্যই জেপ্যাগ ফরম্যাটের হতে হবে দৈর্ঘ্যে ৩২০ এবং প্রস্থে ২৪০ পিক্সেল। এছাড়া ছবির ইমেজ ডেপথ কালার হবে ২৪ বিট কালার, ৮ বিট কালার অথবা ৮ বিট গ্রে স্কেলের। আর স্ক্যান করা ছবি হলে সেটার সাইজ হবে ২ ইঞ্চি বাই ২ ইঞ্চি বা (দৈর্ঘ্যে ৩০০ এবং প্রস্থে ৩০০ পিক্সেল)। প্রতি ইঞ্চিতে ১০ ডট (ডিপিআই) রেজ্যুলেশনে ছবিটি স্ক্যান করতে হবে। ছবির আকার হবে সর্বোচ্চ ৬২.৫০০ বাইট। ছবির পেছনের দিকে সাদা বা হালকা রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডে ছবি হওয়া উচিত। কালো বা খুব গাঢ় বা কোন নকশা করা জমকালো ব্যাকগ্রাউন্ডে তোলা ছবি গ্রহণযোগ্য হবে না। ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে মাথা ঢাকা, টুপি বা হ্যাট পরা ছবি গ্রহণ করা হবে যদি তা আবেদনকারীর মুখমন্ডল আড়াল না করে। অন্য কোন কারণে মাথা ঢাকা বা হ্যাট পরা থাকলে ছবি গ্রহণযোগ্য হবে না এবং আবেদনপত্রও বাতিল হয়ে যাবে।
পূর্ণ ঠিকানা: ঠিকানা, শহর, জেলা, পোস্টাল কোড/জিপ কোড, দেশ। যে দেশে এখন বসবাস করছেন, তার নাম।
ফোন নম্বর: ঐচ্ছিক।
ই-মেইল ঠিকানা: ঐচ্ছিক।
সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা: যা এর মধ্যে আবেদনকারী অর্জন করেছেন, তা কোনটি? শুধু প্রাথমিক শিক্ষা, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা, কিন্তু ডিগ্রি নেই উচ্চমাধ্যমিক ডিগ্রি কারিগরি শিক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কোর্স, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি, স্নাতক পর্যায়ের কিছু কোর্স, স্নাতকোত্তর ডিগ্রি, ডক্টরেট পর্যায়ের কিছু কোর্স, ডক্টরেট ডিগ্রি।
বৈবাহিক অবস্থা: বিবাহিত. অবিবাহিত, তালাকপ্রাপ্ত, বিধাব/বিপত্নীক, বৈধভাবে বিচ্ছেদ।
সন্তানের তথ্য: আবেদনকারীর অবিবাহিত ও ২১ বছরের কম বয়সী সন্তান, আইনগতভাবে বৈধ দত্তক সন্তান, সৎ ছেলেমেয়ে, যারা অবিবাহিত ও যাদের বয়স ২১ বছরের কম, এমনকি যে সন্তান বর্তমানে আবেদনকারীর সঙ্গে থাকেন না বা আবেদনকারীর সঙ্গে অভিবাসী হবেন না, তবু আবেদনকারীকে তাদের নাম, জন্মতারিখ ও জন্মস্থান আবেদনপত্রে উল্লেখ করতে হবে। বিবাহিত সন্তান বা ২১ বছরের বেশি বয়সের সন্তানেরা ডাইভারসিটি ভিসা পাওয়ার যোগ্য নয়। তবে সব ছেলেমেয়েকে তালিকাভুক্ত করা না হলে ভিসার জন্য আবেদনকারী অযোগ্য বিবেচিত হবেন। যেসব সন্তান এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছেন, তাদের ছবি দিতে হবে না।
স্বামী/স্ত্রী-সংক্রান্ত তথ্য: নাম, জন্মতারিখ, লিঙ্গ, জন্মের শহর, জন্মের দেশ এবং ছবি।
সন্তান-সংক্রান্ত তথ্য: নাম, জন্মতারিখ, লিঙ্গ, জন্মের দেশ, জন্মের শহর এবং ছবি।

স্বামী ও স্ত্রী আলাদাভাবে আবেদনপত্র পাঠাতে পারবেন। দু’জনের একজন নির্বাচিত হলে অপরজনও ভিসা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। ডিভি ২০০৯ কর্মসূচিতে আবেদন করার ন্যুনতম কোন বয়সসীমা নির্ধারণ করা না হলেও কার্যত ১৮ বছরের নিচে যেকোনো আবেদনকারীই অযোগ্য বিবেচিত হবেন। ২০০৮ সালের মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যেই আবেদনকারীদের প্রাথমিকভাবে ফলাফল জানিয়ে দেয়া হবে। এবছর বিভিন্ন দেশ হতে ৫০ হাজার অভিবাসী নেয়া হবে। তবে কোন একটি দেশ থেকে ৩৮৫০ জনের বেশি আবেদনকারীকে ভিসা প্রদান করা হবে না। কমপক্ষে এক সপ্তাহ পূর্বেই আপনার ফরম প্রেরণের কাজটি শেষ করুণ। কেননা শেষের দিকে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে শেষের তিন দিনে যদিও এবার অন্যান্য বারের তুলনায় তিনগুণ বেশি শক্তি সম্পন্ন সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আগেই কাজ করা প্রয়োজন।

ডিভি কর্মসূচিতে অংশ নিতে কোনো ফি দিতে হয় না। এ কর্মসূচি পরিচালনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাইরের কোনো উপদেষ্টা বা বেসরকারি সেবাদাতাকে নিযুক্ত করেনি। আবেদনকারীদের ডিভির আনুষঙ্গিক বিষয়াদি প্রস্তুত করার জন্য যদি কোনো মধ্যস্ততাকারী বা অন্য কেউ সহায়তা করার প্রস্তাব দেয়, তাহলে তারা তা করবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কর্তৃত্ব বা সম্মতি ছাড়াই। ডিভি কর্মসূচির আবেদনপত্র তৈরির ব্যাপারে কোনো মধ্যস্থতাকারী বা অন্য কারও সহায়তা নেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরিভাবে নির্ভর করে আবেদনকারীর ইচ্ছের ওপর। আর মূল বিষয় হচ্ছে, কোনো আবেদনকারীর পক্ষে একাধিক আবেদনপত্র পাওয়া গেলে, তা যে উৎস থেকেই প্রেরিত হোক না কেন, আবেদনকারী লটারিতে তালিকাভুক্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা থাকলে নিজের আবেদনপত্র নিজেই পূরণ করতে পারবেন। কম্পিউটার বা ইন্টারনেটের ব্যবহার জানা না থাকলে দক্ষ কারো সহায়তা নিতে পারেন। দেশের প্রায় সর্বত্রই সাইবার ক্যাফেসহ বিভিন্ন জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে ডিভি লটারির আবেদনপত্র পূরণের সেবা দেওয়া হয়। এসব জায়গায় গিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করতে পারেন। তবে আবেদনপত্র পূরণের সময় সচেতন থাকুন, যাতে আপনার নাম, নামের বানানসহ সব তথ্য সঠিকভাবে দেওয়া হয় এবং ছবিটি সঠিক মাপে পাঠানো হয়। ফরম পূরণ করে পাঠানোর পর ওয়েবসাইটে আসা নোটিশটির প্রিন্ট সংগ্রহ করে নিজের কাছে রেখে দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

এই বিষয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস পরামর্শ দিয়েছে, ডিভি ২০০৯ লটারির আবেদন নিজে পূরণ করুন আর দক্ষ কাউকে দিয়ে পূরণ করান না কেন – সাবমিট বোতামে নিজে ক্লিক করুন। সাবমিট বোতামে ক্লিক করার আগে খুব ভালো করে দেখুন সব তথ্য ঠিক আছে কিনা। লটারি নির্দেশগুলো বিস্তারিত জানতে http:/travel.state.gov/visa/immigrants/types/types_1318.html দেখুন।

ডিভি সংক্রান্ত ভূয়া ওয়েবসাইটের তালিকা ও সতর্কতা বাণী পাবেন http:/travel.state.gov/visa/immigrants/types/types_1749.html ঠিকানার ওয়েবসাইটে।