বহুবছর থেকে একটা জিনিস লক্ষ্য করে আসছি, আজকে ভাবলাম এটা নিয়ে লেখা দরকার। ২০০১ থেকে একটা চেষ্টার মধ্যে আছি, কমিউনিটির জন্য কিছু করার। বিভিন্ন কাজ করার চেষ্টা করেছি যাতে অন্যদের কাজে লাগে, বিভিন্ন গ্রুপের সাথে মিশেছি, অনেকে এক হয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয় যা কিছু করেছি কারও ক্ষতি হয়নি তাতে বরং লাভ হয়েছে। যত কাজ করেছি, তত নতুন জিনিস শিখেছি, নেটওয়ার্ক বড় হয়েছে, সর্বোপরি অভিজ্ঞতা বেড়েছে।

কমিউনিটির জন্য প্রথম কাজ করি লোকালাইজেশন নিয়ে। নিজের ভাষায় সবকিছু হবে, সবাই নিজের ভাষায় সব ব্যবহার করতে পারবো। ভাবতেই ভালো লাগতো। ছোট্ট একটা আইএসপি চালাতাম আর বসে বসে অনুবাদের কাজ করতাম, ফন্ট তৈরীর কাজ করতাম। এই কাজ করতে পরিচিত হয়েছি অসাধারণ কিছু মানুষের সাথে। ম্যাক ভাই, জামিল ভাই, সুজন, আলমগীর সহ অনেকে; ভারতেরও দুই একজনের সাথে কাজ করা হতো, চমৎকার সিংক্রোনাইজেশন ছিলো আমাদের মধ্যে। কেউ সরাসরি হয়তো কাজ করতনা, কিন্তু পাশে থেকে ব্যপক সহযোগীতা দিয়েছে, যেমন ইরু ভাই, মোজাহেদুল ভাই, রাসেল ভাই, মুনির ভাই, সহ অনেক অনেক মানুষের। আর কাজের পথেই বন্ধু হিসেবে পেয়েছি হাসিন হায়দারের মতন মানুষকে।

প্রথম থেকে ওপেনসোর্সের প্রতি একটা ঝোঁক ছিলো, ধারণা ছিলো সব কিছু নিজের মতন করে ঢেলে সাজানো যাবে, আর তাই লিনাক্সের এডভোকেসি করেছি প্রচুর। সঙ্গে থেকেছি অঙ্কুর, বিডিলাগবিডিলুয়ার মত সংগঠনের, প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দিয়েছি বিডিওএসএন-এর।

কিন্তু সেই শুরু থেকে একটা জিনিস লক্ষ করেছি যে আমাদের কমিউনিটিতে কিছু মানুষ আছে যারা সাহায্য করার নাম করে আসে, অনেক উঁচা লম্বা কথা বলে এবং পরে কুলশিত করে ফেলে কমিউনিটিকে। ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফ্রেশাররা, হরিয়ে ফেলে দিক নির্দেশনা। একসময় লিনাক্সের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ফোরামগুলিতে কথা হতো, এখন কি হয়েছে জানিনা! চমৎকার অনেকগুলি ফোরম এখন মৃত, এখন আলোচনা কোথায় হয় আমার জানা নাই! আবার আরেক ধরণের মানুষ আছে, যারা “কমিউনিটির জন্য কিছু করছি” বলে কিছু মেনে নিতে পারেনা। একটা ফোরাম করলে সেটার মালিক হয়ে থাকতে চায়; পরে মালিক হিসেবে স্বিকৃতী না দিলে, রাগ করে সব বন্ধ করে দেয়। আরও একদল মানুষ আছে যারা সবসময় উশখুশ করতে থাকে, ও না জানি কি বললো, এ নাজানি কি বলবে এবং না বুঝে মন্তব্য করে, এরকম কথা বলে ফেলে যেটা আরেকজনের বিরুদ্ধে যায় এবং কমিউনিটিতে ঝামেলা লেগে যায়!

এগুলি ছিলো শুরু থেকে, এখন দেখাযায় অনলাইন/অফলাইন মিডিয়াতে কাদা ছেটানো, কে কাকে কত কাদা ছেটাতে পারে। মোস্তফা জব্বার এবং অভ্র’র ঝগড়াটা মনে থাকবে অনেকদিন। অযথা একটা ঝামেলা এতদূর গিয়েছিলো। প্রথমেই যদি মোস্তফা জব্বার রাগ না করে বিষয়টা মেটানোর চেষ্টা করতেন আমার মনেহয় বেশী ঝামেলা হতোনা। এখন অনলাইন মাধ্যমগুলিতে বিভিন্ন বিষয়নিয়ে অনেক নোংরা নোংরা কথা হচ্ছে, কেউ কাজ করছে কমাউনিটি ডেভলাপ করার, কারও গা জ্বলছে অকারণে; শুরু হচ্ছে কাদা ছোঁড়া ছুঁড়ি! কেউ কারও বিরুদ্ধে কথা বললেই যেনো বীর আর কেউ গালি দিয়ে বীর!

একটা ছোট্ট উদাহরণ দি, আমরা শত শত শব্দ অনুবাদ করেছি লিনাক্স, মোজিলা, গুগল্-এর জন্য। এখন গুগল্ ওয়েবদুনিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিয়ে অনুবাদের কাজগুলি করায়!  আমরা যারা প্রথমদিকে গুগল্-এর বিভিন্ন সেবার অনুবাদ করেছি, তারা কি আজকে গুগল্-কে গিয়ে প্রশ্ন করছি যে আমাদের কাজের টাকা না দিয়ে কেন এখন টাকা দিয়ে ওয়েবদুনিয়ার কাছ থেকে অনুবাদ করাচ্ছে! ঠান্ডা মাথায় বসে বসে অনেক কিছু বিলুপ্ত হয়ে যেতে দেখেছি। ভুল করেছি, বকা খেয়েছি, তবে কমিউনিটির ক্ষতি হয়ে এরকম কিছু করিনি।

আমি আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করি যে টোট্‌কা ফোট্‌কা আইটি প্রফেশনালরা একে অন্য প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে কথা বলছে। ওপেনসোর্স নিয়ে যারা কাজ করছে তারা ক্লোজ্‌ড সোর্স প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে যাচ্ছে কোনো কারণ ছাড়া; আবার উল্টোটাও হচ্ছে। আবারও কনফিউজ হচ্ছে ফ্রেশাররা। আমি যদি ওপেনসোর্সের সাকসেস নিয়ে কথা বলি, এক হাজারটা কথা বলতে পারবো, আবার ক্লোজ্‌ড সোর্স প্ল্যাটফর্মে নিয়ে বলতে পারবো হয়তো তারও বেশী। ফায়ারফক্স দিয়ে যেমন কনজিউমার ওয়েব ব্রাউজিং ভালো হয়, সেরকম এন্টারপ্রাইজ এপ্লিকেশন দিনের পর দিন চালাতে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার লাগে। কিন্তু দরকার টা কি এভাবে একটা, আরেকটার সাথে তুলনা করার? যে যার স্থানে শ্রেষ্ঠ!

আইটি নিয়ে আমাদের দেশে ব্যপক সম্ভাবনা, এটা নতুন কিছু না। আমাদের উচিৎ হবে আমারা যে যেখানে আছি, সেই পরিধীর মধ্যে থেকে আমাদের অভিজ্ঞতা নতুনদের সাথে শেয়ার করা, তাদের উৎসাহিত করা। উৎসাহিত করা সবকিছু এক্সপ্লোর করে দেখার জন্য। আমাদের কখনই উচিৎ হবেনা নিজেদের মধ্যে কে কি করলো, কে কি বললো এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানো। আমরা যারা কমিউনিটির উন্নয়ন করার চেষ্টা করি বা করছি, তারা একটু পরচর্চায় কান না দিলে কিন্তু অনেক প্রডাক্টিভ হতে পারি। আর যারা কিছু করতে পরিনা, তারা পরনিন্দা বা পরচর্চাটা উপেক্ষা করে সেই সময়টা কিছু শেখার জন্য কাজে লাগাতে পারি। সেদিন কাকে যেনো বলছিলাম যে দু’লক্ষ টাকা প্রতিমাসে বেতন দিতে চায়, এরকম কোম্পানী ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু লোক পাচ্ছে না শেয়ারপয়েন্টের। কারণ আমরা কখনো এটা নিয়ে আলাপ করিনি, কেউ জানেনা এরকম একটা বাজার আছে। ভাই যেমনই হোক, একটা কর্মশালা বা আলোচনা সভা করলে মানুষ নামটাতো জানতে পারবে; উপস্থিত ২০০ জনের মধ্য থেকে ২০ জন তো এক্সপ্লোর করবে। ২০ জনের মধ্যে থেকে ২ জন এই প্ল্যাটফর্মকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেবে। এটাইতো আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ; আর উপস্থিতদের মধ্যে একটা দল নানারকম মন্তব্য করবে, কিছু মন্তব্য থেকে অনেক কিছু শেখা যায়; সেগুলিকে পজেটিভ ভাবে নিলেই কিন্তু পরেরবার ঝামেলা হয়না। আর আমরা এই চেষ্টাগুলি করি নতুনদের জন্য। যারা জানে, তাদের জন্য এই আয়োজনগুলি হয়না, তাই চেষ্টা করা উচিৎ নতুনদের ফিডব্যাক নেয়ার।

আমি মনে করি আইটি প্রফেশনে যারা আছে, সে একটা কম্পিউটারের দোকানের বিক্রতা হতে পারে আবার গ্রামীণফোনের সিইও হতে পারে, এদের বুদ্ধিমত্তা সাধারণ মানুষের থেকে অনেক বেশী। আমরা কেন আমাদের বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার না করে বোকার মতন নোঙরা কাজ করবো! কেনো আমরা কারও কথা না ভেবে, কিছু চিন্তা না করে একটা পদক্ষেপ নেবো বা একটা মন্তব্য করবো!

শেষে একটা কথা বলতে চাই নতুনদের জন্য। পৃথিবীতে অপশন সবসময় থাকবে, এসকিউএল সার্ভার জেনেছি দেখে ওরাকল জানা যাবেনা, এই ধারণা রাখা ঠিক না। নিজের জ্ঞানের পরিধী যত থাকবে কর্মক্ষেত্রে অপশন তত বেশী হবে। পিএইচপি শিখলে যে উইন্ডোসে কাজ করা যাবেনা এরকম ধারণা নিয়ে বেশীদূরে যাওয়া যায়না। নিজেকে সবসময় ওপেন রাখতে হবে অপশনের জন্য আর হাতের কাছে যা পাওয়া যায় একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই অনেক কিছু শেখা যায়। তথ্য-প্রযুক্তিকে ক্যরিয়ার হিসেবে নিতে যে পিএইচডি ডিগ্রি নিতে হবে, এমন কথা নেই। আশে পাশে দেখা শীর্ষ তথ্য-প্রযুক্তিবিদরা বেশীরভাগই কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে লেখাপাড় করেননি। আর যেহেতু আমরা রাজনীতিবিদ নই, আসুননা একে অপরের হাত ধরে, এক কমিউনিটি অন্য কমিউনিটির সাথে মিশে একত্রিত হয়ে নিজেদের উন্নত করি!

🙂