আনেকেই জানেননা যে একসময় আমার একটা আইএসপি ছিলো দিনাজপুরে। একটি আইএসপি’র মূল কাজ হচ্ছে এক উৎস থেকে ইন্টারনেট গ্রহণ করে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে বিলি করা। এর বাহিরে অন্যান্য কাজও থাকে, কিন্তু মূল কাজ ওটাই। আমার যখন আইএসপি ছিলো আমি এই জিনিসগুলি বুঝতাম না আর আমাকে যারা ভি-স্যাটের মাধ্যমে লাইন দিয়ে গিয়েছিলো তারা বিভিন্ন তাল বাহানা করে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে গিয়েছিলো আমার কাছ থেকে। আমার স্যাটেলাইট মোডেম থেকে কানেকশন গিয়ে ঢুকতো একটা সার্ভারের ল্যান কার্ডে আর সেটা সার্ভারে বিভিন্ন প্রথার মাধ্যমে রাউট হয়ে আরেক ল্যান কার্ড দিয়ে বের হয়ে আসতো এবং সেই বের হয়ে আসা কানেকশনটাই আমরা শেয়ার করে দিতাম গ্রাহকদের।

আইএসপি’র মতই আমার অনেকে বাসাবাড়িতে একাধিক কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করি। একটি কানেকশন আইএসপি থেকে এসে ঢোকে একটি কম্পিউটারে আর সেই কম্পিউটার থেকে শেয়ার হয়ে যায় ক্লায়েন্টগুলিতে। উইন্ডোজে বিষয়টি খুবই সোজা এবং আমি সদ্য শিখলাম যে লিনাক্সেও বিষয়টি সোজা। এই টিউটোরিয়ালে আমি সেটাই উপস্থাপন করবো যে কিভাবে লিনাক্স দিয়ে ইন্টারনেট শেয়ার করা যায়। 🙂

প্রথমেই আমাদের লাগছে একটি কম্পিউটার দু’টো ল্যান কার্ড সহ। জিনোম প্যানেল থেকে System -> Administration -> Network -এ যাবো।

গেলেই একটি উইন্ডো আসবে যেখানে আমাদের উপস্থিত কানেকশনগুলি দেখাবে

ঐ যে বললাম আমাদের কম্পিউটারে দু’টো ল্যান কার্ড লাগানো থাকবে, উপরের ছবিতে দু’টো ল্যানকার্ড দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে একটি ল্যান কার্ডে লাগানো আছে আমার আইএসপি থেকে আসা কানেকশন এবং অন্যটি লাগানো আছে আমার হাব/সুইচ বা অন্য একটি কম্পিউটারের সাথে। এই ক্ষেত্রে আমাদের জেনে রাখতে হবে যে কোন কার্ডে কোন লাইন আছে, আমার এখানে eth0 নামের ল্যান কার্ডটি লাগানো আছে আমার গৃহ নেটওয়ার্কের কানেকশন আর অন্যটিতে আমার আইএসপি’র কানেকশন।

প্রথমে আমদের আইএসপি কানেকশনটিকে নির্বাচন করে Properties বোতামে ক্লিক্ করতে হবে। করলেই একটি উইন্ডো আসবে যেখানে আমার আইএসপি সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দিতে হবে।

এই যেমন আমার আইএসপি’র আইপি কত, সাবনেট মাস্ক ঠিকানা কি, গেটওয়ে কি, ইত্যাদী। বিভিন্ন আইএসপির বিভিন্ন রকম সেটিংস হয়ে থাকে। এখানে কিছু পরিবর্তন করার আগে আমাদের সবার উপরের Enable roaming mode নামের টিকবাক্স থেকে টিক্ তুলে দিতে হবে।

আমার আইএসপিতে কোনো সেটিংস উল্লেখ করে দিতে হয়না, সেটিংসগুলি সয়ংক্রিয়ভাবে DHCP সার্ভার থেকে আসে তাই আমি Configuration ড্রপডাউন মেনু থেকে Automatic Configuration (DHCP) নির্বাচন করে দেবো। আপনাদের আইএসপি’র কোনো সেটিংস উল্লেখ করতে হলে আপনারা Static IP address নির্বাচন করে দিয়ে বিস্তারিত তথ্য নীচের বাক্সগুলিতে উল্লেখ করে দেবেন।

এর পরে এখানকার কাজ শেষ হলে OK বোতাম চেপে এই উইন্ডো বন্ধ করে দেবো এবং আগের উইন্ডোতে ফিরে যাবো। একই ভাবে আমার গৃহ নেটওয়ার্কের সাথে যেই ল্যান কার্ডটি আছে (এখানে eth0) সেটা নির্বাচন করে Properties বোতামে ক্লিক্ করবো।

এই উইন্ডোতেও প্রথমে Enable roaming… টিকবাক্স থেকে টিক্ তুলে দিতে হবে এবং Configuration ড্রপডাউন থেকে Static IP address নির্বাচন করতে হবে। তারপরে IP Address ঘরে দিতে হবে 192.168.0.1 আর Subnet mask ঘরে দিতে হবে 255.255.255.0 এবং Gateway address ঘরটি ফাঁকা রাখেই OK ক্লিক করতে হবে।

এবার আমরা আবার আগের উইন্ডোতে ফিরে আসবো এবং সেখানে দু’টি কানেকশনের পাশে দু’টি ফাঁকা চেক্ বক্স দেখা যাবে সেই দু’টি টিক দিয়ে দিতে হবে।

উপরের ছবিতে আমি লাল দাগ দিয়ে বুঝিয়েছি কোন দু’টি টিকবাক্স।

টিক্ দেয়ার পরে আমরা Close বোতামে চাপ দিলে লিনাক্স নিজে নিজে কিছু কনফিগারেশন আপডেট করবে।

আর আপডেট হয়ে যাবার সাথে সাথে Network Settings উইন্ডোটি বন্ধ হয়ে যাবে।

এবার একবার পরীক্ষা করে নিতে হবে যে আমাদের ইন্টারনেট সংযুগ ঠিক আছে-কি-না। যদি ঠিক না থাক, তাহলে এখনই উপরের ধাপগুলিতে ফিরে গিয়ে দেখতে হবে কোনোকিছু ভূল হয়েছে কি-না।

এখন আমরা যেটি করতে যাবো, সেটা করার আগে আমাদের উবুন্টু লিনাক্সে সফটওয়্যার ইনস্টলেশনের প্রথম ধাপ হয়ে আসতে হবে। যদি সেগুলি আগে করে থাকেন, তাহলে আর দরকার নাই, শুধু সিনেপ্টিক প্যাকেজ ম্যানেজার আরম্ভ করলেই হবে।

সিনেপ্টিকের Search বোতামে ক্লিক্ করে Find উইন্ডোতে firestarter লিখে Search বোতামে ক্লিক্ করতে হবে।

ফলাফল যা আসবে সেখানে firestarter এর উপরে মাউসের ডান বোতাম দিয়ে ক্লিক্ করে Mark for installation নির্বাচন করতে হবে।

এরপরে সিনেপ্টিকের মূল উইন্ডোতে Apply চাপ দিলে সিনেপ্টিক আমাদের অবগতির জন্য একটি উইন্ডোতে দেখাবে যে কি কি ইনস্টল হতে যাচ্ছে।

আমরা এখানে Apply করে দেবো এবং সিনেপ্টিক সব ইনস্টল করে ফেলবে।

একবার ইনস্টল প্রক্রিয়া শেষ হবার পরে আমরা জিনোম প্যানেল থেকে

Application -> Internet -> Firestarter নির্বাচন করে Firestarter এপ্লিকেশনটি আরম্ভ করতে পারি।

এই প্রোগ্রামটি সম্পর্কে একটু বলে নেই। এটি আসলে একটি ফায়ারওয়াল এপ্লিকেশন কিন্তু ফায়ারওয়ালের পাশাপাশি এটি ইন্টারনেট কানেকশন শেয়ার করার মতন কাজও করে। যাইহোক, প্রথম যে উইন্ডোটি আসবে সেটাতে Forward বোতামে ক্লিক্ করবো।

এবার যা করতে হবে সেটা হলো আমার কোন নেটওয়ার্ক কার্ডটি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত আছে সেটা নির্বাচন করতে হবে। আমার এখানে eth0 সংযুক্ত ছিলো গৃহ নেটওয়ার্কের সাথে এবং অন্যটি আইএসপি বা ইন্টারনেটের সাথে। Detected device(s) তালিকা থেকে সেই নামটি নির্বাচন করে অন্য টিকবাক্সগুলি দেখবো। আমরা আমরা যেহেতু ডায়াল-আপ ব্যবহার করছিনা, তাই সেই টিকবাক্সটি অপরিবর্তিত রেখে দেবো। আমার আইএসপি যেহেতু DHCP (যেটা উপরে বলেছি) সমর্থন করে সেহেতু আমি আমি IP address is assigned via DHCP বাক্সটিতে টিক্ দিয়েছি (আপনারটা সেরকম না হলে বাক্সটিতে টিক্ দেবেন না এবং সেই অনুযায়ী অন্যান্য তথ্যগুলি পূরণ করবেন, আবার Forward বোতামে ক্লিক্ করবো।

এরপরের ধপে আমরা Enable Internet connection sharing টিকবাক্সে টিক দেবো এবং নীচের Local area network device তালিকা থেকে সেই কার্ডটি নির্বাচন করবো যেটা লোকাল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত আছে। আমার এখানে eth0 লোকালের সাথে সংযুক্ত, তাই আমি সেটা নির্বাচন করে দিলাম। পরের টিকবাক্সটি হলো Enable DHCP for local network, আপনি চাইলে এটি টিক দিতেও পারেন আবার নাও পারেন। যদি দেন, তাহলে আপনার নেটওয়ার্কের কম্পিউটার(গুলিতে) হাতে হাতে আইপি বসাতে হবেনা এবং তার জন্য আপনাকে DHCP নামের একটি মডিউল সিনেপ্টিক দিয়ে ইনস্টল করতে হবে। আমি সেটা করার পরামর্শ দিচ্ছি না। আমি উপরের ছবিটি তোলার সময় ঐ টিকটি দেয়া ছিলো, আপনার সেরকম নাও করতে পারেন। সুতরাং ঐ টিকের ঘরটি ফাঁকা রেখে Forward বোতামে ক্লিক্ করুন।

আমাদের সবকিছু এবার ঠিকভাবে হয়েছে। এই ধাপে Save বোতামে ক্লিক্ করে আমরা আমাদের কাজ শেষ করতেই Firestart আরম্ভ হয়ে যাবে এবং আমরা নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত অন্যান্য কম্পিউটার থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবো।

তার আগে জানিয়ে দেই ক্লায়েন্ট মেশিনগুলিতে কি করতে হবে। ক্লায়েন্ট মেশিনগুলিতে আপনি 192.168.0.2 থেকে 192.168.0.254 পর্যন্ত আইপি ব্যবহার করতে পারবেন। সাবনেট মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করবেন 255.255.255.0 এবং গেটওয়ে হিসেবে ব্যবহার করবেন 192.168.0.1 আর ডিএনএস এর ঘরে আপনার আইএসপি’র ডিএনএসগুলি উল্লেখ করে দিতে হবে। আপনি সেটা না জেনে থাকলে আপনার আইএসপি থেকে জেনে নিন।

উল্লখ্য য, আপনি Firestarter বন্ধ করার সাথে সাথে আপনার ইন্টারনেট কানেকশন শেয়ার বন্ধ হয়ে যাবে, আবার যতক্ষণ Firestarter আরম্ভ না করবেন, ততক্ষণ আপনার ইন্টারনেট অন্য কম্পিউটারগুলি থেকে ব্যবহার করা যাবে না। সুতরাং কি করতে হবে তা নিশ্চয়ই আপনি বুঝছেন…

🙂

আশাকরি আপনাদের অনেক কাজে লাগবে এই প্রথা। আপনাদের যদি কম গতির কম্পিউটার থাকে তাহলে সেটাতে xubuntu ইনস্টল করে সেটাকে এই কাজে ব্যবহার করতে পারেন। xubuntu একটি দ্রুতগতির লিনাক্স যা কম গতি সম্পন্ন মেশিনে খুব ভালো চলে।