Tags

, , ,

আমার এক বন্ধু, টেলিভিশনে অভিনয় করে। নামটা বলছিনা (নাম বললেই সবাই চিনে ফেলবেন), আমাকে মামা ডাকে। আমি উনাকে নিয়ে ১১টার মত নাটিকা করেছিলাম পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের জন্য। চলতি মাসের শুরুর দিকে গাজীপুরের পুবাইল এলাকায় শুটিং চলছিলো আমার বন্ধুর প্রোডাকশন হাউজের। আমি সকাল সকাল গেলাম সেখানে, অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়না দেখে। ওখানে পৌছাতেই আমার ঐ বন্ধু দুর থেকে আমাকে ট্যাক্সি থেকে নামতে দেখে চিৎকার করে আমাকে বলছে “মামা গ্রামীণফোন তো গোয়া মেরে দিলো।” আমি ট্যাক্সি ভাড়া চুকিয়ে দিয়ে উনার কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম কি হয়েছে, উনার মোবাইলের সংযোগ বন্ধ হয়ে গ্যাছে এবং উনি ২ দিন থেকে সবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

বেশকিছুদিন ধরে ভাবছি এই বিষয়টা নিয়ে কথা বলা দরকার। সময় করে উঠতে পারছিলাম না। গ্রামীণফোন আমাদের দেশের সবচাইতে বড় মোবাইল অপারেটর। উনাদের গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি (!) এবং উনাদের দাবী একসাথে ২ কোটি গ্রাহকই কথা বলছেন, কেউ সিম ফেলে দেন নাই। কথাটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য না। আমার নিজের গ্রামীণ সিমটাইতো আমি চালাচ্ছি না। সেই সাথে আছে পরিচিত অনেকেই। তাই ভুয়া কথা বলার লিমিট নাই গ্রামীণ ফোনের বলে ধরে নিচ্ছি আপাতত।

দেশের সবচাইতে খারাপ নেটওয়ার্ক এখন গ্রামীনের। কি কারণে আমি জানিনা। তবে আমার একটা মন্তব্য আছে যেটা শেষে লিখছি। আমাদের দেশে অনেকদিন থেকেই চলছিলো মোবাইল ব্যবহারকারীদের পুনরায় রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি। সেটা নিয়ে আমি আমার ব্লগে / টা পোস্ট এর আগেও দিয়েছি। আমার সূত্রের দেয়া খবরে গ্রামীনফোনের গ্রাহকরাই ঠিকমতন তাদের নম্বরগুলি রেজিস্ট্রেশন করছিলো না, যার জন্য বার বার পুনরায় রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিটিআরসি’র হাত পা ধরে তারিখ বর্ধিত করিয়েছে তারা এবং শেষে রেজিস্ট্রেশন করলে টাকা পাবেন, এরকম লোভ দেখিয়েছে তারা। শেষের দিকে গ্রামীণ পান দোকান বা মোবাইল টু মোবাইল টং দোকানেও রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু করে, যাতে মানুষ রেজিস্ট্রেশন করে। তারা মানতেই নারাজ যে অনেকে তাদের সিম ফেলে দিয়েছে এবং অন্য অপারেটর ব্যবহার করছে এবং শান্তিতে আছে। যাই হোক রেজিস্ট্রেশনের তারিখ শেষ হবার পরে একে একে বিভিন্ন নম্বর বন্ধ হয়ে গেলো। এর মধ্যে আমার সেই অভিনেতা বন্ধু একজন, আমার নিজের একটি সিম, আমার এক ছোটোবোন এবং আমার বস্ও আছে।

আমার অভিনেতা বন্ধুর শেষ পর্যন্ত কি হয়েছে তা জানিনা। সে কিন্তু আমাকে অনেক জোর দিয়েই বলেছিলো যে সে রেজিস্ট্রেশন করেছে এবং গ্রামীণ শালাদের ঢাকায় গিয়ে দেখে নেবে। সেদিনো ওর ঐ নম্বর বন্ধ দেখলাম, মনেহয় সেও ৯ বছরের ব্যবহৃত সিমের মায়া ভুলে গিয়ে অন্য নম্বর ব্যবহার করছে। আমার বস্ কানাডা গিয়েছে, সেখান থেকে জার্মানি যাবেন, লম্বা সফরে আছেন। উনি যাবার আগেরদিন দুপুর থেকে নম্বরটা বন্ধ, গ্রামীণে ফোন করে জানতে চাইলে বলে রেজিস্ট্রেশন না করায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। অথচ সিমের রি-রেজিস্ট্রেশনের কাগজ আমাদের অফিসেই আছে। বস্ যেহেতু চলে গেছেন, তাই ঐ বিষয়টাও এখনো সমাধান করা হয়নি।

আমার যেই ছোটো বোনটার কথা বললাম সে ঢাকার উত্তরায় এক বেসরকারী মেডিকেল কলেজে পড়ে। ৩/৪ মাস আগে নর্থ টাওয়ারের গ্রামীণফোন সেন্টার থেকে ঐ সিমটা কিনেছিলো। ছবি, আইডি কার্ডের কপি, সব দিয়েছে। কিন্তু ওর নম্বর তো বন্ধ হবার কথা না, যেহেতু নতুন নম্বর। গ্রামীণের কাছ থেকে জানা গেলো যে গ্রামীণ নাকি সমস্থ ব্যবহারকারীদের বলেছিলো পুনরায় রেজিস্ট্রেশন করতে। নতুন পুরাতন যেই হোক, সবাইকে নাকি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এরকম কবে বললো সেটাই বুঝলাম না, আর কাগজপত্র দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে সিম কিনে কি আবার ওদের ওখানে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে!!! যাই হোক, সেই সিমের কাগজ নিয়ে আমি গেলাম জসিমউদ্দিন রোডের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে। বিশা-আ-আ-আ-আ-ল লাইন। সবারই একই সমস্যা, রেজিস্ট্রেশন করেছে লাইন বন্ধ। যাদের কাগজ আছে সেই কাগজের কপি গ্রামীণের কর্মীরা নিয়ে বলছে ৭২ ঘন্টার মধ্যে লাইন চালু হয়ে যাবে। তাহলে তো আমার ঐ বন্ধুর মতো বলতেই হয়, এই ৭২ ঘন্টা কি পাবলিক গোয়া মারাবে?

যাই হোক, প্রায় এক ঘন্টার মতন অপেক্ষা করে আসলাম কাউন্টারে। কাগজ যেহেতু আছে, লাইন তো আমার বোনেরটাও চালু হয়ে যাবে। কাগজ হাতে নিয়ে কম্প্যুটারে কি টিপা টিপি করে বলছে এই কাগজ নকল। আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। ওদের সেন্টার থেকে কেনা সিমের কাগজ দেখে বলছে এটা বলে নকল কাগজ। আমি অনেক কষ্টে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম কি সমস্যা ভাই, বলে আপনার কাগজের নাম আর আমাদের ইনফরমেশন ঠিক নাই!!! আমি বললাম আপনাদেরও তো ভুল হতে পারে। বলে অসম্ভব। আমি কথা না বাড়িয়ে বের হয়ে আসছি এই সময় আমার পরিচিত ইউএনডিপি’র গাড়ির এক ড্রাইভার আমাকে জিজ্ঞেস করলো ভাই কি হলো। আমি ঘটনা বললাম। উনি তখন উনার এক্সপেরিয়েন্স বললো। উনি নাকি সিম রেজিস্ট্রেশন করেছিলো ঐ টাকা দেবার সময়। কি একটা অফার ছিলো না, এখন সিম রেজিস্টার করলে পাবেন ১০০ টাকা আর অন্যজনদের করিয়ে দিলে ৫০ টাকা। উনি সেই সময় রেজিস্ট্রেশন করেছেন। কিন্তু টাকা পায়নি আর লাইনও বন্ধ হয়ে গ্যাছে। 🙂 আমি আমার বোনটাকে একটা ওয়ারিদের সিম কিনে দিলাম।

কি অবস্থা!!!

গ্রামীণের এই সব সমস্যার পাশাপাশি আছে ভয়েসের সমস্যা। আপনি জিপি থেকে জিপ কথা বললে শুধু কথা কেটা কেটে যায়। অভিযোগ করলে বলে আমাদের সমস্যা নাই, আপনি হ্যান্ডসেট বদলান। আমার হ্যন্ডসেট দিয়ে সব অপারেটর ঠিক চলে ওদেরই সমস্যা। আরেকটা মজার খবর দেই। গ্রামীণফোন ক্রস কানেকশন। আমার বৌ এর ছোটোভাই আমাদের সাথেই থাকে। ও আবার ডিজুস ফ্যান। কয়েকদিন আগে ওর মোবাইলে একটা কল আসে, রিসিভ করে দেখে দু’জন কথা বলছে (প্রেমালাপ করছে)। অনেক চেষ্টা করেও ওদেরকে কিছু বলতে পারলাম না, আমার কথা ওরা শুনতে পাচ্ছে না, আমরা শুধু ওদের কথা শোনা যাচ্ছে। গতকালকের কথা। অফিস থেকে টিএন্ডটি দিয়ে আমাদের অফিসের এক ড্রাইভারকে ফোন করা হলো, আবার ক্রস কানেকশন। এক ম্যানেজার তার নিম্নপদস্ত কর্মচারীকে ঝাড়ছে। 🙂

এই হলো গ্রামীণের সার্ভিসের অবস্থা! এরা বলে কাছে থাকুন, এতই কাছে যে একজনের সিম আরেকজনের নামে রেজিস্টার হয়। এতই কাছে যে দু’জনের কথা অন্যজন শুনছে। একসময় দেখা যাবে ২ কোটি (!) গ্রাহক সবাই সবার কথা শুনতে পাচ্ছে। 🙂 কে কাকে কি বলছে বোঝা যাচ্ছে না। তবে সবাই কিন্তু কাছে থাকছে। এক বাসের ভেতর যখন ৪০ জনের জায়গায় ৮০ জন ঠুকে তখন যেমন কাছে থাকে, এখানেও তাই হয়েছে মনে হয়।

উপরে বলেছিলাম যে ওদের সেবা সম্পর্কে আমার একটা মন্তব্য আছে, সেটা হচ্ছে- আমার ধারণা গ্রামীণের ইঞ্জিনারদের ঘুষ খাবার অভ্যাস হয়ে গেছে এবং সেই সুযোগ নিয়ে অন্য অপারেটররা তাদের ঘুষটুস দিয়ে সার্ভিস খারাপ করে রেখেছে যাতে মানুষ বিরক্ত হয়ে ওদের সার্ভিস বাদ দিয়ে দেয় (পরিচিত অনেকেই দিচ্ছে এবং দিয়েছে এর মধ্যে), আর আমার দৃড় বিশ্বাস যে এরকম পরিকল্পনা যে করেছে সে সম্পুর্ণ সফল।