মোবাইল প্ল্যান

অনেকদিন থেকেই ভাবছি বিষয়টা নিয়ে লেখা দরকার, কিন্তু লেখা হয়নি। আজকে হঠাৎ ফেসবুকে আব্দুন নূর তুষারের পোষ্টটি চোখে পড়লে আবার বিষয়টি নিয়ে লেখার উৎসাহ ফিরে পাই।

আমার ধারণা আমাদের দেশের ৯০%-এর বেশী মোবাইল ফোন গ্রাহক প্রিপেইড মোবাইল সংযোগ ব্যবহার করেন, যার কারনে এই বিষয়টা নিয়ে সেরকম মাথা ব্যাথা কারও নেই। অথচ একসময় মোবাইল অপারেটাররা অনেক মুলা ঝুলিয়ে পোস্টপেইড সংযোগগুলি বিক্রি করেছে গ্রাহকদের কাছে, যার খেসারত এখনো দিতে হচ্ছে। আমি যদি তুষার ভাইর লেখাটি কোট করি, উনি লিখেছেন-

গ্রামীন ফোন ১৯৯৭ সালে পোস্টপেইড গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫০০০ টাকা নিরাপত্তা জামানতে হিসেবে নিয়ে ফোন দিয়েছিল। ১৫ বছরে ব্যাংকে রাখলে এখন এই টাকা হবার কথা ২০ হাজার। তার মানে তারা পোস্টপেইড এর নামে আসলে আমাদের দিয়েছে প্রি পেইড ফোন। এটা একটা প্রতারণামূলক কর্ম। দেশের সবচেয়ে বড় প্রতারক প্রতিষ্ঠান ডেস্টিনি বা হলমার্ক নয়, এর নাম জিপি। … রবি শেখাতে শুরু করেছে ইংরেজী.. ফ্রিজিং কোল্ড মানে বেসম্ভব ঠান্ডা…. টেলিফোনে ডাক্তারী পরামর্শ… বেসম্ভব গাধামী…

কথাগুলি কী সত্য না? দু-একটা অপারেটর বাদে, বেশীরভাগ অপারেটরের পোস্টপেইড সংযোগে কলচার্জ বেশী। কল চার্জ কম হলে দেখা যায় অন্য সুবিধা নেই, একটা না একটা সমস্যা আছেই পোস্টপেইড সংযোগে। এটা যেমন ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা। ছোট্ট কিছু উদাহরণ দেখি –

  • রবি‘র পোস্টপেইড প্যাকেজে এই মুহূর্তে কলচার্জ ৳০.৯০ প্রতি মিনিটে, অথচ রবির প্রিপেইডেই ৳০.৮৪ প্রতি মিনিট প্যাকেজ আছে।
  • রবি প্রিপেইড প্যাকেজে গ্রাহক চাইলে বিভিন্ন ইন্টারনেট বান্ডেল (১ মেগা, ১০ মেগা, ১ গিগা ইত্যাদি) প্যাকেজ ব্যবহার করতে পারেন, পোস্টপেইড গ্রাহকদের সেই সুবিধা নেই।
  • বাংলালিঙ্কের তো বেহাল দশা। পোস্টপেইডের বিল ৳১.২৩ প্রতি মিনিট, অথচ প্রিপেইডে তাদের ৳০.৮৪ প্রতি মিনিট প্যাকেজ আছে। এরা অন্যদের রেকোর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে।
  • রবির মতো বাংলালিঙ্কেও প্রিপেইড গ্রাহকদের জন্য ইন্টারনেট বান্ডেল অপশন অনেক বেশী এবং পোস্টপেইডে অনেক সীমিত অপশন।
  • গ্রামীণফোন আবার বাংলালিঙ্কের চেয়ে কম যায়না। ৳১.২০ প্রতি মিনিট পোস্টপেইডের কল চার্জ, অথচ প্রিপেইডের কল চার্জ ৳১.০৮ প্রতি মিনিট।
  • শুধু এয়ারটেলের ক্ষেত্রেই পোস্টপেইড সংযোগের খরচ সবচাইতে কম দেখা যায়। পোস্টপেইডে ৳০.৭৭ প্রতি মিনিট এবং ৳০.৯৬ প্রতি মিনিট প্রিপেইডে।
  • তবে ঝামেলা আছে এয়ারটেলের ইন্টারনেটে। পোস্টপেইডে ৳৩৫০.০০-এ ১ গিগা ডেটা, আবার প্রিপেইডে ৳৩১৬.২৫-এ ১ গিগা। পোস্টপেইডে বান্ডেল অপশন অনেক সীমিত।
  • অসমতা দেখা যায় টেলিটকেও, পোস্টপেইডে ৳০.৯৯ প্রতি মিনিট এবং প্রিপেইডে ৳০.৯০ প্রতি মিনিট।

শুধু বিল ছাড়াও পোস্টপেইড সংযোগ চালানোর আরও কিছু ঝামেলা আছে। এদের মধ্যে সবচাইতে বিরক্তিকর কয়েকটি হলো –

  • ক্রেডিট লিমিট থাকলেও কোম্পানি ভেদে ৭০-৮০% ব্যবহার হয়ে যাবার পরে কল করতে না দেয়া,
  • ক্রেডিট লিমিট পার হওয়ায় কোনো নোটিফিকেশন না আসা,
  • নগদ টাকা জমা রেখে ক্রেডিট লিমিট বাড়ানো,
  • ব্যাংকে বিল দিলেও সেটা সময়মতো এডজাস্ট না হওয়া,
  • ক্রেডিটকার্ড দিয়ে অটোডেবিট চালু করে রাখলেও সময়মত বিল না নিয়ে লাইন বন্ধ করে দেয়া, ইত্যাদি।

বিদেশে পোস্টপেইড সংযের সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশী। যেমন –

  • একজন পোস্টপেইড গ্রাহক অপারেটরের কাছ থেকে কিস্তিতে একটা দামী ফোন নিতে পারে, যা মাসের বিলের সাথে পরিশোধ করতে হয়।
  • প্রতি মিনিট বিল না গুনে নিজের ব্যবহারের উপর আন্দাজ করে একটা বান্ডেল কিনতে পারে, যাতে সে কল, এসএমএস, ইন্টারনেট সহ সব সুবিধা অনেক সাশ্রয়ী মূল্যে পায়।
  • বছরে নতুন নতুন উপহার সহ অনেক কিছু।

বিটিআরসি অনেক কাজ করলেও আমার ধারণা এগুলিতে সমতা আনার জন্য কিছু করেনা, বা কখনো চোখেও দেখেনি যে এরকম একটা অসম ব্যবসা করে যাচ্ছে মোবাইল অপারেটরগুলি দিনের পর দিন।

পোস্টপেইড সংযোগ কিন্তু সাধারণ ব্যবহারকারীরা ব্যবহার করেনা, যারা ব্যবহার করে, তাদের নুন্যতম কমিটমেন্ট থাকে অপারেটরের সাথে। পোস্টপেইড সিম কিনতে হয় বেশী টাকা দিয়ে, আবার সিকিউরিটি ডিপোজিট রাখতে হয়। কিন্তু তারপর কি লাভ!! ঐ টাকা ব্যাংকে ফেলে রাখলেওতো সুদ পাওয়া যাবে। তুষার ভাইর কথাইতো ঠিক।

*উপরের চার্জগুলি এক অপারেটর থেকে অন্য অপারেটরের সাথে কল করার ক্ষেত্রে অনেকগুলি অপশনের মধ্যে সর্বনিম্নটি, এবং ভ্যাট ছাড়া।