বাংলাদেশের বাজারে ব্লুটুথ এখন খুব সহজলভ্য একটা পণ্য। মোবাইল, ক্যামেরা, এমপিথ্রি প্লেয়ার প্রায় সব পোর্টেবল ডিভাইসে ব্লুটুথ-এর ব্যবহার রয়েছে। জাপানের সনি’র আবিষ্কৃত এই প্রযুক্তিটি সত্যই মজার। আগে একটা মোবাইল থেকে ছবি কম্পিউটারে নিতে বা কম্পিউটার থেকে এমপিথ্রি প্লেয়ারে গান নিতে তার ব্যবহার করতে হতো, এখন তার ছাড়াই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুব সহজে যোগাযোগের কাজগুলি করা যায়। ব্লুটুথের আরও বিবিধ ব্যবহার রয়েছে, যেমন: কম্পিউটারের মধ্যে তারবিহীন নেটওয়ার্কিং, তারবিহীন মাউস এবং কী-বোর্ড ব্যবহার, তারবিহীন হেডফোন ব্যবহার ইত্যাদী। তবে বাংলাদেশে এর ব্যবহার সবচাইতে বেশী হয়ে থাকে মোবাইলের সাথে কম্পিউটারের যোগাযোগের জন্য।

আমরা একেকজন একেকটা মডেলের মোবাইল ব্যবহার করি। তাদের তারের মডেলও আবার ভিন্ন, আবার ২৫০ টাকার কমে কোনো কেবল পাওয়া যায়না (নিজের দোকান হলে অবশ্য আলাদা কথা) বাজারে। তাই ব্লুটুথ হলো একটি সামগ্রীক সমাধান। প্রায় সব ভালো মোবাইলে এটা উপস্থিত এবং এক সেটিং দিয়েই সব মোবাইলে একরকম কাজ করা যায়। একবার ব্লুটুথ ইনস্টল করে নিয়ে মোবাইল ভেদে আলাদাভাবে কিছু করতে হয়না। ২৫০ টাকার ভেতরে বাংলাদেশের বাজারে খুব সুন্দর ব্লুটুথ ডঙ্গল পাওয়া যায়। তার নষ্ট হয়ে যাবার ভয় থাকে, কিন্তু ব্লুটুথ বেশ স্থায়ী একটা সমাধান।

বেশ কিছুদিন ধরে আমি উইন্ডোজ ভিস্তা ব্যবহার করছি এবং আমি যেহেতু মোবাইল ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহার করি, আমিও এই তারের ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে চাইছিলাম। বাজার থেকে একটা ব্লুটুথ ডিভাইস কিনে নিয়ে এসে দেখি সেটার সাথে Bluesoleil নামের একটা সফটওয়্যার দেয়া এবং যার সংস্করণ 1.6, যেটা চার বছর আগের একটা সফটওয়্যার। আমি Bluesoleil-এর ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখলাম তারা Bluesoleil-এর 2.3 সংস্করণটি টাকার বিনিময়ে বিক্রি করছে। আমি বিষয়টি বুঝতে পারলাম না, আমি যাদের হার্ডওয়্যার কিনেছি, তাদের উচিৎ সেটার জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার বা ড্রাইভার বিনামূল্যে বিতরণ করা। তারা কি মনে করে ব্যবসা করছে বুঝলাম না।

প্রথমে আমার উইন্ডোজ ভিস্তায় Bluesoleil-এর 1.6 সংস্করণটি ইনস্টল করার চেষ্টা করি এবং আমার চেষ্টা বিফলে যায়। পরে 2.3 সংষ্করণটির ট্রায়াল নামিয়ে ইনস্টলের চেষ্টাও বিফলে যায়। ইন্টারনেটে অনেক সমাধান খোঁজার চেষ্টা করলাম, কিন্তু দুর্ভাগ্য, Bluesoleil ওয়ালারা বলছে যে তাঁদের 3.0 সংষ্করণটি ভিস্তায় চলবে, কিন্তু সেটা তারা বিক্রি বা বিতরণ করছেনা।

কিন্তু এটা জেনে আমার বসে থাকলে চলবেনা। আমাকে তো ভিস্তায় ব্লুটুথ ব্যবহার করতেই হবে। শেষ পর্যন্ত অনেক ঘেঁটে ঘুঁটে একটা সমাধান করতে পারলাম। সেটা এখন সবাইকে জানিয়ে দিতে চাই, যাতে আমার মতন আপনারা আর বিপদে না পড়েন।

ইনস্টলেশন প্রক্রিয়ায় যাবার আগে আমাদের কম্পিউটারে যদি কোনো ব্লুটুথ সফটওয়্যার ইনস্টল করা থাকে, সেটাকে কন্ট্রোল প্যানেল থেকে আন-ইনস্টল করে নিতে হবে। এবং কম্পিউটারের সাথে কোনো ব্লুটুথ ডিভাইস সংযুক্ত করা থাকলে সেটাকে খুলে রাখতে হবে। নরটন এন্টিভাইরাস অকার্যকর করে রাখতে হবে (ভয় নেই এটা শুধু ফাই প্রটেকশনকে অকার্যকর করার জন্য। আমার এই ড্রাইভার বা সফটওয়্যারে কোনো ধরণের ভাইরাস নেই। আর নিশ্চত হতে না পারলে, ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া শেষ হবার পরে একবার কম্পিউটার স্ক্যান করে দেখুন) এবং উইন্ডোজের ফায়ারওয়াল বন্ধ করে রাখতে হবে। আমি এখানে ভিস্তায় কাজ করেছি। আপনারা চাইলে উইন্ডোজ ২০০০ বা এক্সপি তেও কাজ করতে পারেন। Bluesoleil-এর চাইতে এটা অনেক ভালো সমাধান আর অনেক কম মেমরী খায়।

প্রথমে আমাদের WIDCOMM BlueTooth নামের একটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করতে হবে। সেটা ডাউনলোড করা যাবে এখান থেকে। 🙂 এই WIDCOMM_BlueTooth.zip ফাইলটা একটি ফোল্ডারে এক্সট্রাক্ট করতে হবে। এবার ইনস্টল প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য আমরা যেখানে ফাইলগুলি এক্সট্রাক্ট করেছি, সেই ফোল্ডারে ঢুকে setup.exe চালাতে হবে।

ইনস্টল চালালে প্রথমে এরকম একটি উইন্ডো আসবে যেখানে আপনাকে লাইসেন্সের চুক্তি গ্রহন করে Next বোতামে ক্লিক্ করে সামনে এগুতে হবে।

এর পরে এরকম একটি উইন্ডো আসবে, এখানে আপনি বলে দিতে পারেন যে আপনি কোন ফোল্ডারে ফাইলগুলি রাখতে চান। আমার মনেহয় আপনি এটি না বুঝলে কিছু পরিবর্তন না করে Next বোতামে ক্লিক্ করুন।

এবার ইনস্টলেশন শুরু হয়ে যাবে এবং এরকম প্রগ্রেস বার দেখতে পাবেন।

ইনস্টলেশনের এক পর্যায় এরকম একটি সতর্কবার্তা দেবে। এটা দেয়ার কারণ হচ্ছে আপনি যেই ড্রাইভারগুলি ইনস্টল করছেন সেটিতে মাইক্রসফটের ডিজিটাল স্বাক্ষর নেই। স্বাক্ষর দিয়ে কি হয়, সেটা যেহেতু আমরা বুছিনা, তাই এটা নিয়ে আমাদের মাথা না ঘামিয়ে প্রদত্ত দু’টি পছন্দের মধ্যে নীচের Install this driver software anyway-তে ক্লিক্ করব।

এরকম বেশ কয়েকবার আসবে এবং আমরা একই কাজ বারবার করব।

ড্রাইভার ইনস্টলেশনের কাজ শেষ হতেই এরকম একটি সতর্কবার্তা আসবে যে আপনার কম্পিউটারে কোনো ব্লুটুথ ডিভাইস সংযুক্ত নেই। আপনি এই সতর্কবার্তাটিকে তোয়াক্কা না করে Cancel বোতামে ক্লিক্ করে পরবর্তি ধাপে চলে যাবেন।

এ পর্যায়ে ইনস্টলেশন শেষ হয়ে যাবে এবং আপনি Finish বোতামে ক্লিক্ করবেন।

উইন্ডোজ আপনাকে কম্পিউটার পুনরায় চালু করার জন্য একটি বার্তা দেবে, এবং আপনি Yes ক্লিক্ করে কম্পিউটার পুনরায় চালু করবেন।

কম্পিউটার চালু হয়ে যাবার শুরুতেই F8 কী চেপে বুট মেনু থেকে Safe Mode নির্বাচন করে এন্টার দিন। কম্পিউটার সেফ মোডে চালু হয়ে গেলে আমরা ডাউনলোড করা WIDCOMM_BlueTooth.zip ফাইলটি যে ফোল্ডারে একস্ট্রাক্স করেছিলাম, সেটির ভিতরে যান। এখানে দেখতে পাবেন bluetooth_patches নামের একটি ফোল্ডার আছে। এই ফোলডারের ভেতর থেকে BTNeighborhood.dll এবং wbtapi.dll ফাইল দুইটি C:\Windows\System32 ফোল্ডারে কপি করে দিন। System32 ফোল্ডারে আগে থেকেই এই নামের ফাইল আছে, তাই সেগুলিকে ওভার-রাইট করে ফেলতে হবে।

ঐ একই ফোল্ডারে BTStackServer.exe এবং BTTray.exe ফাইল দু’টিকে কপি করে C:\Program Files\WIDCOMM\Bluetooth Software ফোল্ডারে পেস্ট করতে হবে আগের গুলিকে ওভাররাইট করে। কম্পিউটার স্বাভাবিকভাবে পুনরায় চালু করুন এবং আপনার ব্লুটুথ ডিভাইসটি কম্পিউটারে লাগিয়ে ফেলুন।

কম্পিউটার চালু হয়ে সয়ংক্রিয়ভাবে ব্লুটুথ ড্রাইভার ইনস্টল হয়ে যাবে এবং টাস্কবারে একটি ব্লুটুথ লোগো দেখা যাবে, সেটাকে ডাবল ক্লিক্ করলে উপরের মতন একটি উইন্ডো আসবে, সেটার Next বোতামে ক্লিক্ করতে হবে।

এরপরে এরকম একটি উইন্ডো আসলে সেটাতে আপনার পছন্দের সেটিং দিয়ে Next বোতামে ক্লিক্ করতে হবে।

এরপরে এরকম একটি উইন্ডো আসলে সেটাতে আপনি যেই সেবাগুলি ব্যবহার করতে চান সেগুলি নির্বাচন করুন। যে সেবাগুলি আপনার কাজে আসেনা, সেগুলি বন্ধ করে রাখাই উত্তম, এতে আপার রিসোর্স কম ব্যবহার হবে।

এর মধ্যেই আপনাকে বেশ কিছু সেটাপ করতে হবে, যার মধ্যে এই পিন অংশটি গুরুত্বপুর্ণ। এখানে যে পিনটি ব্যবহার করবেন, অন্য ডিভাইসটিতেও একই পিন ব্যবহার করতে হবে।

এখন আপনার ব্লুটুথ সেটাপ শেষ এবং আপনি এটা অনায়াসে যে-কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারেন।

এই যেমন আমি মোবাইল দিয়ে ডায়াল-আপ ব্যবহার করছি।

আগেও বলেছিলাম আবার বলছি, এটা শুধু যে ভিস্তায় চলবে তা-না, এই সমাধান উইন্ডোজ এক্সপি, ২০০৩ বা ২০০০ অপারেটিং সিস্টেমেও চলবে।

কাজে লাগলে একটা ধন্যবাদ দেবেন… 🙂