তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। এ কথা বোঝা যায় ওয়েবসাইটে ভোটার তালিকা প্রকাশ ও সংশোধনের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ইন্টারনেট, অনলাইন ও ওয়েবসাইটের ব্যবহার আমাদের দেশে দিন দিন বাড়ছে। একজন ভোটার এখন www.voterlist.gov.bd ঠিকানার ওয়েবসাইটে ঢুকে তাঁকে দেওয়া পিন বা ব্যক্তিগত পরিচিতি নম্বর, জন্ন তারিখ এবং ওয়েব পাতায় থাকা নিরীক্ষা সংকেত লিখে তার নিজের ভোটারসংক্রান্ত তথ্য যাচাই করে দেখতে পারবেন। আর তথ্য-সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের ত্রুটি সংশোধনের জন্য তিনি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই অনুরোধ করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন একটি শুদ্ধ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরির লক্ষ্যে এই ওয়েবসাইটটি প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটি বিডি ডট কম যৌথভাবে এ সাইটটি তৈরি করেছে।

এই সাইটে জন্নতারিখ কীভাবে লিখতে হবে তার একটি নমুনা দেওয়া থাকলেও পিন কীভাবে লিখতে হবে তার কোনো নির্দেশনা নেই। অর্থাৎ ১৭ সংখ্যার এই নম্বর কি একটানা লিখতে হবে নাকি যেভাবে কাগজে ফাঁক দিয়ে দিয়ে নম্বর সরবরাহ করা হয়েছে, সেভাবে লিখতে হবে তার কোনো নির্দেশনা নেই। তবে সাইটটিতে ঢুকে দেখা গেছে একটানা এই নম্বর লিখেই ভোটারের তথ্য পাওয়া যায়। এ প্রতিবেদক লেখার সময় (২৩ জানুয়ারি) এই সাইটে ঢাকা মহানগরীর উত্তরা, উত্তরখান, ক্যান্টনমেন্ট, কোতোয়ালী, তেজগাঁও, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, শাহবাগ, সুত্রাপুর ও হাজারীবাগ থানার ভোটার দের তথ্য পাওয়া গেছে।

নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। সেই ওয়েবসাইটটি সবার পরিচিতও বটে। গুগলে বা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিনে ‘ইলেকশন কমিশন বাংলাদেশ’ লিখে তথ্য খুঁজলে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটটি পাওয়া যায়। কিন্তু ভোটার তালিকা সংশোধনের ওয়েবসাইটটির ঠিকানা সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে বের করতে না পেরে, খবরের কাগজ থেকে ঠিকানাটি সংগ্রহ করতে হয়েছে। অন্ততপক্ষে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ভোটার তালিকা সংশোধন-সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের একটি সংযুক্তি (লিঙ্ক) থাকা দরকার। এটি কিন্তু স্বাভাবিক নিয়মেই থাকার কথা, যেহেতু ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা নির্বাচন কমিশনের একটি কাজ। যত দিন ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলবে, তত দিন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের প্রথম পাতায় দৃষ্টিগোচর করে ভোটার তালিকা সংশোধনের ওয়েবসাইটের ঠিকানাটি এখন থেকেই থাকা দরকার।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ভোটার তালিকার জন্য ছবি তোলা, আঙ্গুলের ছাপ দেওয়ার কমবেশি ১৫দিন পর ওয়েবে ভোটারের তথ্য পাওয়া যাবে। ওয়েবে প্রকাশের পর ১৫ দিন পর্যন্ত ভোটার অনলাইনে তাঁর তথ্য সংশোধনের সুযোগ পাবেন।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেল, তাঁদের কেউ কেউ পত্রিকায় খবরটি পড়েছেন, আবার অনেকেই পড়েননি। এ অবস্থায় যাঁরা পত্রিকা পড়েন না, তাঁদের জন্য বেতার এবং টেলিভিশনে যেমন ভোটার তালিকা ওয়েবে সংশোধনের বিজ্ঞপ্তিটি প্রচার হওয়া দরকার, তেমনি একজন থেকে অন্যজনের মুখে মুখে তথ্যটি ছড়িয়ে পড়ার জন্য হলেও কিছুটা সময় দেওয়া দরকার। তা ছাড়া কেউ যদি হ্যাক করতেই চায়, তার জন্য ২৪ ঘণ্টাই যথেষ্ট, ১৫ দিন নয়।

ওয়েবে ভোটার তালিকা সংশোধনের এই সুযোগ আপাতত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ভোটারদের জন্য উন্নুক্ত করা হলেও এটি পর্যায়ক্রমে সকল জেলা ও উপজেলার জন্য চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। একজন ভোটার যদি দেখেন যে প্রকাশিত তথ্যে কোনো ধরনের ভুলত্রুটি রয়েছে, তবে তিনি শুদ্ধ তথ্যসহ ভুলের বিষয়টি মন্তব্যের ঘরে উল্লেখ করতে পারবেন। তবে তিনি নিজ হাতে মূল তথ্যভান্ডার (ডেটাবেইস) কোনো তথ্যই সংশোধন করতে পারবেন না। তিনি ভুলগুলো উল্লেখ করে দেওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন কমিশন সেই ভুলগুলো সংশোধন করে তাঁর জন্য নির্ধারিত ওয়েব পাতাটি হালনাগাদ করবে। সর্বশেষ হালানাগাদ সম্পর্কে একজন ভোটার জানতে পারবেন কি না সে সম্পর্কে কোনো কিছু ওয়েবসাইটে বলা নেই।

এই ওয়েবসাইটটি বাংলা ভাষায় প্রস্তুত করা হয়েছে, যা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। আর যে কাজের জন্য সাইটটি, অর্থাৎ ভোটারের তথ্য জানা সে কাজটি খুব দ্রুত হয় এতে।
উৎস: দৈনিক প্রথম আলো
লেখক: মোহাম্মদ গোলাম নবী
লেখকের সাথে যোগাযোগ ই-মেইল: gnabi1969@yahoo.com

আপডেট: আমি একটা নুতন ওয়েব সাইটের সন্ধান পেলাম, সেখানে না-কি ভোটারের তথ্য পাওয়া যায়। আরও জানতে দেখুন: http://www.becvoterlist.com/