Tags
২০০৮ সালে বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) ব্যবহার কেমন ছিল, এ খাতের উন্নয়ন ও অগ্রগতি কেমন হলো−এসব হিসাব-নিকাশ করার সময় এখন। নানা ঘটনা ঘটেছে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা গেছে তথ্যপ্রযুক্তির নানা রকম ব্যবহার। আবার অনেক কিছুই প্রত্যাশা অনুযায়ী পূরণ হয়নি গত বছর। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির অবস্থা কেমন গেল ২০০৮ সালে তাই বলেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী
তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা
২০০৮ সালে তথ্যপ্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির মধ্যে আছে তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালা। ২০০২ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির (আইসিটি) যে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছিল সেটাকে হালনাগাদ করার জন্য সরকার একটি কমিটি গঠন করে।সে কমিটি প্রায় তিন মাস কাজ করে একটি নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করে। যদিও সরকার আশা করেছিল আগের নীতিমালায় কী কী পরিবর্তন প্রয়োজন তা ঠিক করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু নীতিমালা প্রণীত হওয়ার পর প্রযুক্তি এতটাই এগিয়ে গেছে যে কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় নতুন একটি নীতিমালা করার জন্য। এটা করে সরকারের হাতে দেওয়া হয়েছে প্রায় দুই মাস আগে। ২০০২ সালের নীতিমালার সঙ্গে এ নীতিমালার একটি মৌলিক পার্থক্য হলো এখানে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের লক্ষ্যমাত্রা ও করণীয়গুলো আরও সুনির্দিষ্টভাবে দেওয়া হয়েছে। দেখা গেছে, এতে সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে প্রায় ৩০০টি বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা এখানে স্বল্প মেয়াদি, মাঝারি, দীর্ঘ ইত্যাদি ভাগে ভাগ করে দিয়েছি। সময়ের উল্লেখ ছাড়াও এখানে বলে দেওয়া আছে, এর বাস্তবায়নে ঠিক কার কী করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে আলোচনায় আমার মনে হয়েছে, তারা এটা করে যেতে চাচ্ছিল। কিন্তু আর তো সময় নেই তাদের। এখানে কিছু সমস্যাও ছিল। কোনো নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষমতা এ সরকারের ছিল কি না সে বিষয়েও সন্দেহ করে অনেকে।
নির্বাচিত সরকার এলে আমি আশা করব, তারা এটা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিবেচনা করে খুব তাড়াতাড়ি গ্রহণ করে নেবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে মহাজোট সরকার গঠন করতে যাচ্ছে, তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে পরিষ্ককারভাবে বলা আছে, ২০২১ সালের মধ্যে তারা তথ্যপ্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখতে চায়। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়টি।
দুর্ভাগ্যবশত গত দুই বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ছিল তার প্রতিফলন আমরা দেখিনি। এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে বিশেষ সহকারী ছিলেন একজন, তাঁর আগে দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টার অনেক দায়িত্বের মধ্যে ছিল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
ইন্টারনেটের দাম কমেছে
গত কিছুদিনে আমাদের অর্জনের মধ্যে একটা হলো যে ইন্টারনেট ব্যবহার তথা ব্যান্ডউইডথের দাম কমেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ইন্টারনেট সহজলভ্য হচ্ছে। গত বছর তারহীন যোগাযোগ প্রযুক্তি ওয়াই-ম্যাক্সের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে এর সুফলও পাওয়ার কথা। এ ছাড়া ইন্টারনেট টেলিফোনি বা ভিওআইপির লাইসেন্সও দেওয়া হয়েছে। এর ব্যবহার পুরোপুরি শুরু হলে আন্তর্জাতিক যোগাযোগে আমাদের বেশ উন্নতি হবে।
নির্বাচনের বছরে তথ্যপ্রযুক্তি
২০০৮ সালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এখানে উল্লেখ করার মতো বিষয় হলো রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়টিকে এনেছে। যদিও এর মধ্যে কমবেশি ছিল। অনেক দল দায়সারাভাবে অনেকটা না বুঝে এ বিষয়টি এনেছে। আমার ধারণা, আমাদের তরুণ প্রজন্ন তাদের সমর্থন দিতে তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়টিকেও বিবেচনায় এনেছে। আরেকটা বড় কাজ হয়েছে। আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে গত বছর, এর কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে। আমরা একটা সমৃদ্ধ তথ্যভান্ডার পেয়েছি এর মাধ্যমে। ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজটিও হয়েছে বেশ ভালোভাবে। তবে আমার মনে হয়, জাতীয় পরিচয়পত্রে যে ধরনের নিরাপত্তা বিষয় ও তথ্যধারণের কথা ছিল বা ছবির যে গুণগত মান থাকা উচিত ছিল তা এ স্বল্পমূল্যের প্রযুক্তি দিয়ে সম্ভব হয়নি অনেকটাই। এ জন্যই হয়তো বেশির ভাগ লোকেরই এ নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ আছে। এটাকে জাতীয় পরিচয়পত্র করতে হলে আরও কিছু কাজ করতে হবে।তবে তথ্যভান্ডারটা অনেক কার্যকর একটা বিষয়। এ বিষয়টি দেখভালের জন্য আলাদা একটা বিভাগও করেছে সরকার। তথ্যভান্ডারের এমন কাজ বিশ্বের অনেক উন্নত দেশও করতে পারেনি। আমরা স্বল্প খরচে কম সময়ে এটা করতে পেরেছি। ভোটার তালিকা থেকে যে এক কোটির ওপরে ভুয়া ভোটারের নাম বাদ গেল, এটা সম্ভব হয়েছে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলেই। এখানে আরেকটি বিষয় হলো, বাংলাদেশের আট কোটির বেশি ভোটার এ উপলক্ষে প্রত্যেকেই একবার হলেও কম্পিউটারের সামনে গিয়েছেন। এই যে অনেকেই কম্পিউটার দেখলেন এবং কম্পিউটারের ক্ষমতা জানলেন, এটা কম্পিউটার সম্পর্কে সচেতনতা ও জনপ্রিয়তা বাড়াতে কাজ করবে, বিশেষ করে ভবিষ্যতে আমরা যখন এ প্রযুক্তিকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব। এ বছর তথ্যপ্রযুক্তির মেলাগুলোও বেশ বড় পরিসরে হয়েছে।
শিক্ষায় নেই অগ্রগতি
গত বছর তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। কম্পিউটার বিজ্ঞান, কম্পিউটার প্রকৌশল ইত্যাদি বিষয়ে একসময় শিক্ষার্থীদের যে প্রবল আগ্রহ দেখা যেত, এখন তা দেখা যায় না। কম্পিউটার শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ যে ক্রমাগত কমছে, আমার ধারণা, গত বছরও তা অব্যাহত ছিল। এ জায়গাটায় বড় ধরনের পরিবর্তন হওয়া দরকার। তথ্যপ্রযুক্তির বিরাট সুযোগ কাজে লাগাতে এ খাতে একটা বড় জনশক্তি লাগবে আমাদের। তবে ইদানীং টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে। এটা হয়তো বাংলাদেশে চলমান চাকরির বাজারের জন্যই।
ই-গভর্নেন্সে অগ্রগতি
ই-গভর্নেন্সে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে এ বছর। এখন বাংলাদেশের গেজেটগুলো ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। এটা হয়েছে রেগুলেটরি রিফর্ম কমিশনের সুপারিশে, যদিও আইসিটি টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে আমরা এটা অনেক আগেই সুপারিশ করেছিলাম। সরকারি বিভিন্ন নীতিমালা, ফরম ও তথ্য এখন ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে যত আইন প্রণীত হয়েছে, সবই এখন ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আইনজীবীদের খুব কাজে আসবে এটি। হয়তো ভবিষ্যতে বিভিন্ন মামলার বিস্তারিত তথ্যও তুলে দেওয়া সম্ভব হবে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটও আগের চেয়ে অনেক তথ্যবহুল হয়েছে। নির্বাচন কমিশন কিংবা বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইটের চেহারা এখন বেশ দেখার মতো হয়েছে।
সফটওয়্যার রপ্তানিতে গতি দ্রুত নয়
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা খাতে সফটওয়্যার রপ্তানি হয়তো কিছুটা বেড়েছে, কিন্তু সেটা যথেষ্ট দ্রুতগতিতে হচ্ছে না। এখানে আশানুরূপ সফলতা পাচ্ছি না। কিছুদিনের মধ্যে হয়তো কলসেন্টারের সুযোগটা আমরা ধরতে পারব। এ জন্যও প্রস্তুতি দরকার এখন থেকেই। তবে ইউরোপীয় কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ দিচ্ছে।
ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যবসা ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এটা অনেকটা বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতেই। মোবাইল ফোন ব্যবহার করে বিল পরিশোধসহ বেশ কিছু সেবা খাতে কিছুটা অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে।
প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই
আমাদের প্রত্যাশা, নতুন বছর নতুন সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতে তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে। এর মধ্যে সবার আগে তারা হাইটেক পার্কের কথা ভাবতে পারে। যেহেতু ২০০১ সালে এর পরিকল্পনার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম, আমার খুবই খারাপ লাগে যখন দেখি যে এর কোনো অগ্রগতি হয় না। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর এর কাজও থেমে গেছে। এ সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে হাইটেক পার্ককে বিবেচনায় আনবে বলে আমার বিশ্বাস। আর তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা খাতে সরকারের বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত। আরেকটি বিষয় সরকার বিবেচনা করতে পারে, যেটি আমার কাছে অনেক সময় জগাখিচুড়ি বলে মনে হয়। আগে ছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সেটাকে হঠাৎ নাম বদলে করা হলো বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এটাকে আমি বলি “কসমেটিক চেঞ্জ”। এখানে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, অন্য প্রযুক্তি গেল কোথায়? সে জন্য আমার মনে হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মতো বিস্তৃত এ বিষয়টিকে আলাদা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে বেশিগুরুত্ব দেওয়া দরকার এখনই।
লিখেছেন জাবেদ সুলতান পিয়াস, ২ জানুয়ারি ২০০৮ এর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায়
ওমি ভাই,
খুব সুন্দর একটা খবর প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ। এই সরকারের কাছে তথ্য প্রযুক্তি’র সবচে বড় উন্নতি আশা নয় কাজে প্রমান চাইছি…. দেখি বতর্মান সরকার আমাদের কি দেয়। তাদের কথার মূল্যায়ন কতটুকু তারা করে।
সেই সুন্দর দিনের অপেক্ষায়…. যখন ভিওআইপি’র উম্মুক্ত হবে। নতুবা আমাদের এই দেশ অতল গহ্ববরেই থেকে যাবে।
ওমি ভাই,
নতুন ডাটাবেস টা সম্বন্ধে আমার একদম ধারনা নেই। এটা কেমন? ভোটার লিস্ট গুলো সব ঠিকঠাক থাকবেতো? নাকি এটাও আমাদের র্যাব এর ওয়েবসাইটের মত highly secured! hacking এর ২৪ ঘন্টা পর হ্যাকারদের ধরা হবে, আর তারপর ক্যামেরার সামনে বক্তৃতা দেওয়া হবে- আমাদের প্রযুক্তি ওনেক উন্নত, আমরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামীদের ধরে ফেলেছি। আসামীরা নিজেদের খুব চালাক ভাবে, আসলে তারা চালাক না, আমরাই বেশি চালাক!