Sim Cards২৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৬-এর আগে যারা মোবাইল ফোন সংযোগ কিনেছেন, বাংলাদেশ টেলিফোন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) নির্দেশে গত ১৬ অগস্ট থেকে সেসব গ্রাহকের ব্যবহৃত সিমকার্ডের বিনামূল্যে আবার রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হয়েছে। এ রেজিস্ট্রেশনের জন্য মোবাইল সিমকার্ডের গ্রাহককে তার মোবাইল ফোন অপারেটরের নিকটস্থ কাস্টমার সার্ভিস, কাস্টমার সেন্টার অথবা কাস্টমার পয়েন্ট থেকে রেজিস্ট্রেশন ফরমটি সংগ্রহ করে তা সঠিকভাবে পূরণ করে দুই কপি সত্যায়িত পাসপোর্ট সাইজ ছবি, ব্যবহৃত সিমকার্ড ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যে কোনো ফটো পরিচয়পত্রের ফটোকপিসহ (ড্রাইভিং লাইসেন্স, বন্দুকের লাইসেন্স, আইডি কার্ড, ট্রেড লাইসেন্স, পাসপোর্ট ইত্যাদি) জমা দিতে হবে। যদি কারো কোনো ফটো আইডেনটিটি কার্ড না থাকে, তাহলে মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছ থেকে বিটিআরসি অনুমোদিত প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি (উপজেলা/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা ওয়ার্ড কমিশনার) বা ফার্স্ট ক্লাস গেজেটেড অফিসারের কাছ থেকে সত্যায়িত করেও আবার রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। ১৬ অক্টোবর-২০০৭ পর্যন্ত আবার রেজিস্ট্রেশনের আওতায় প্রত্যেক গ্রাহক বিনামূল্যে ছবি ও নাম-ঠিকানা পরিবর্তনের সুযোগ পাবেন। ফলে সিমকার্ডের কোনো কাগজপত্র না থাকলে কিংবা মালিকানা পরিবর্তন হলেও কোনো সমস্যা হবে না।

দীর্ঘদিন ধরেই বিটিআরসি মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রত্যেক গ্রাহকের তথ্যাদি সংরক্ষণের জন্য নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর করতে তেমন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে বিটিআরসি বাধ্য হয়েই আবার রেজিস্ট্রেশনের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি যেসব গ্রাহক তাদের মোবাইল সিমকার্ডের পুনঃরেজিস্ট্রেশন করবেন না তাদের বিরুদ্ধে জরিমানা আদায়সহ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে অবৈধভাবে ব্যবহৃত মোবাইল সিমকার্ডগুলো যেমনি বন্ধ হয়ে যাবে, ঠিক তেমনি প্রকৃত মোবাইল ফোন সংযোগ ব্যবহারকারীদের সংখ্যাও জানা সহজ হবে।

উদ্যোগটি ভালো। তবে বিটিআরসির নির্দেশে পুনঃরেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে অনেক মোবাইল ফোন সংযোগ ব্যবহারকারীই ভোগান্তির মুখোমুখি হচ্ছেন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেয়ার জন্য। গ্রাহকদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাড়াতে হচ্ছে। গ্রামীণফোন, সিটিসেল এবং একটেলের অনেক কাস্টমার সার্ভিস, কাস্টমার সেন্টার, কাস্টমার পয়েন্ট সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পুনঃরেজিস্ট্রেশনের কাজ করার পাশাপাশি গ্রাহকদের নিজে উপস্থিত হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ফরম পূরণ করে জমা দিতে বাধ্য করছে। যেসব গ্রাহক লোক মারফত ফরম সংগ্রহ করে জমা দিতে চাচ্ছেন, তাদের কোনো পুনঃরেজিস্ট্রেশন ফরম দেয়া হচ্ছে না। ফলে ছাত্রছাত্রী, চাকরিজীবী, বিশেষ করে সমস্যায় পড়ছেন বয়স্ক লোকজন য দের জন্য মোবাইল ফোনই যোগাযোগের প্রধান উপায়।

গ্রামীণফোনের ঢাকার নাহার প্লাজায় অবস্থিত কাস্টমার সেন্টারে পুনঃরেজিস্ট্রেশন করতে আসা রেজাউল হক আলম অভিযোগ করে বলেন, লোক মারফত তিনি ফরম সংগ্রহ করতে পারেননি। ফলে বাধ্য হয়েই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে তিনি পুনঃরেজিস্ট্রেশন করতে এসেছেন। এ ব্যাপারে গ্রামীণফোনের ওই কাস্টমার সার্ভিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা তাদের কাছে পর্যাপ্ত ফরম নেই, তাই ফরম দেয়া হচ্ছে না বলে জানান। সিটিসেলের এলিফ্যান্ট রোড কমপিউটার মার্কেটে অবস্থিত কাস্টমার পয়েন্ট কোনো গ্রাহক নাম-ঠিকানা, ছবি পরিবর্তন করতে চাইলে ১০০ টাকা করে ফি আদায় করছে। গ্রাহকদের ফরম দেয়া হলে তারা তা নষ্ট করবে, এ অজুহাতে এ কাস্টমার পয়েন্ট থেকে ফরম দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে একটেল তার সব গ্রাহকের রেজিস্ট্রেশন পয়েন্টের ঠিকানা জানতে থানার প্রথম তিন অক্ষর তারপর স্পেস দিয়ে জেলার প্রথম তিন অক্ষর লিখে ৮৭৩৪ নাম্বারে এসএমএস করতে বলেছে। ফলে গ্রাহকদের এসএমএস বা অতিরিক্ত অর্থ দিতে হচ্ছে। অনেক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী অভিযোগ করে বলেছেন, মোবাইল ফোন অপারেটরদের এমন আচরণের কারণে অনেকে গ্রাহকই পুনঃরেজিস্ট্রেশনে আগ্রহ বোধ করছেন না। ফলে সম্ভবনা রয়েছে রেজিস্ট্রেশনের সময় শেষ হওয়ার আগে ভীড়ের কারণে ভোগান্তি বাড়তে পারে আরো। বিটিআরসির পক্ষ থেকে বন্যা, রমজান মাসের কথা বিবেচনা করে রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা বর্ধিত করার সঙ্গে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পুনঃরেজিস্ট্রেশনের সুযোগ প্রদানের পাশাপাশি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও ফরম সংগ্রহের সুবিধা প্রদান করা না হলে বিটিআরসির উদ্যোগ অনেকটাই ব্যাহত হতে পারে। গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে বিটিআরসি এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটিই এখন সবার প্রত্যাশা।

খন্দকার হাসান শাহরিয়ার-এর রিপোর্টটি গত ২৫ তারিখের দৈনিক যায় যায় দিন পত্রিকা থেকে নেয়া হয়েছে। 🙁