আমরা এখন অস্থির হয়ে গিয়েছি মোবাইল ইন্টারনেটের বিজ্ঞাপন দেখতে দেখতে অস্থির হয়ে গিয়েছি। বাংলাদেশের প্রতিটি মোবাইল কোম্পানীই এখন মোবাইলে ভয়েস সেবার পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। সিটিসেল, গ্রামীণ, একটেল, বাংলালিঙ্ক, টেলিটক এবং ওয়ারিদ টেলিকম হচ্ছে আমাদের মোট মোবাইল কোম্পানী। এদের মধ্যে প্রথম ইন্টারনেট সেবা নিয়ে আসে গ্রামীণফোন। বিভিন্ন ধরণের ঘাপলা করে সার্ভিস লঞ্চ করছে। শুরুতে এরা অনেক ভাষণ দিয়েছে, EDGE দিয়ে এটা হয়ে ওটা হয়, এটা GPRS থেকে এই এই সেবা বেশী দেবে ইত্যাদী। এক কনফারেন্সে আমি ওদেরকে বলতেও শুনেছিলাম যে EDGE নাকি CDMA থেকে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা দেয়, কি বলে না বলে ঠিক নাই। এর পরে আসলো একটেল, যার সেবা আজ দুই বছর পরেও পর্যন্ত বাংলাদেশের সব এলাকায় পৌছাতে পারেনি। তারপর বাংলালিঙ্ক ও টেলিটক, এদের কথা বলতে গেলে বলতে হয়, সার্ভিস থাকা আর না থাকা একই কথা। বাকী থাকলো সিটিসেল। অনেক কাঠ খঁড় পুড়ে প্রায় একবছর আগে তারা অনটেস্ট ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা শুরু করে। কিন্তু সেবার মূল্য এত বেশী যে সাধারণ মানুষ এর ধরা ছোঁয়ার বাহিরে থেকে যায়। কিছুদিন আগে প্রতিযোগিতার সন্মুখীন হয়ে তারা আবার মূল্য নির্ধারণ করে, কিন্তু সেটাও সাধারণভাবে ব্যবহারের যোগ্য না। ওয়ারিদ টেলিকম সার্ভিস লঞ্চ করার সাথে সাথেই ওয়েব সাইটে EDGE/GPRS-এর কথা লিখে রাখলেও বাস্তবে সেবার মান টেলিটক এবং বাংলালিঙ্কের মতই জঘন্য।

সেবার মানের দিক দিয়ে আপাতত সিটেসেল এবং গ্রামীনফোনের সেবাই ব্যবহারযোগ্য, কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে এদের সেবা কতটুকু ব্যবহারযোগ্য! আমি নিজে এই দুই কোম্পানীর সেবা ব্যবহার করেছি, সেবার মান খারাপ না, কিন্তু সত্যি কথা বলতে এই সেবার উপরে ভরসা করা যায়না। মাঝে মাঝেই গ্রামীণফোনের ইন্টারনেটের গতি ঠিক থাকেনা। ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাটি করে GSM প্রযুক্তি সম্পর্কে শিখলাম। এই প্রযুক্তিটা TDMA নামে পরিচিত, যার অর্থ হচ্ছে Time Division Multiple Access. এটা কাজ করে সময়ের উপরে। সোজা সাপ্টা অর্থ হচ্ছে একটা টাওয়ারে নীচে যতগুলি মোবাইল থাকবে টাওয়ারটা তাদেরকে অল্প অল্প সময়ের জন্য ফ্রিকোয়েন্সি প্রদান করবে আবার অল্প সময়ের জন্য ফ্রিকোয়েন্সি বন্ধ করে রাখে। এভাবে ভাগাভাগী করে মোবাইলগুলি কিছু সময়ের জন্য নেটওয়ার্ক পায় আর কিছু সময় বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। এটা এত দ্রুত হয় যে গ্রাহকরা টের পায়না। তবে প্রযুক্তিটা জনপ্রিয় হলেও টেকনিকালি সুবিধার না।

CDMA আবার সব গ্রাহককে একসাথে একই সময়ে ফ্রিকোয়েন্সি প্রদান করে এবং বিশেষ একটি কোডের মাধ্যমে তাদের পৃথক করে। যার জন্য সবাই সমান নেটওয়ার্ক পায় এবং যেহেতু এরা কোড ব্যবহার করে, তাই প্রযুক্তির নাম Code Devision Multiple Access.

এখন প্রযুক্তিগতভাবেই গ্রামীণফোন দুর্বল, একটা BTS Cell এর আওতায় (উল্লেখ্য একটা টাওয়ারে সাধারণত তিনমূখী তিনটা BTS Cell থাকে) একসাথে তিনটার বেশী মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গেলেই BTS Cell এর আর ক্ষমতা থাকেনা সবাইকে সমান মানের সেবা প্রদান করা আর তাই যে টাওয়ারের আওতায় গ্রাহক যত বেশী হবে, সেই এলাকার ইন্টারনেটের অবস্থা তত খারাপ হবে। গ্রামীণফোন যে হারে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে, তাতে গ্রাহক যদি বেড়ে যায়, গ্রামীনফোনের সেবার মান অত্যন্ত খারাপ হয়ে যাবে এবং সেটা ঠিক করার জন্য তারা কিছুই করবেনা, কারণ এই সেবায় আয়ের চাইতে ব্যায় বেশী। এটা ভবিষ্যতের কথা না, ওদের এখনি এই অবস্থা চলছে। ঢাকার বেশীরভাগ এলাকায় ব্রডব্যান্ডের সেবা অসম্ভব খারাপ হওয়ায় মানুষ গ্রামীণফোনের উপরে নির্ভর হয়ে পড়েছেন ইন্টারনেট সেবার জন্য। এভাবে বিভিন্ন এলাকায় এত গ্রাহক বেশী হয়ে গিয়েছে সেবার মান অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে উত্তরা, মালিবাগ, মিরপুর, হাজারীবাগ, উত্তরখান, দক্ষিনখান ইত্যাদী এলাকায় সেবার মান জঘন্য। মাঝে মাঝে ঠিক হয়, সম্ভবত যে সময় গ্রাহকরা অনত্র থাকে এবং BTS Cell-এ চাপ কম থাকে, তখন মোটামুটি ভালো হয়, কিন্তু বেশীরভাগ সময়গুলিতেই সেবার মান থাকে জঘন্য।

আকাশছোঁয়া ট্যারিফের জন্য সিটিসেলের ইন্টারনেট ব্যবহার করা না গেলেও ওদের সেবার মান এখনো বোশ ভালো, কিন্তু ঝামেলা হলো এদের নিজেদের নেটওয়ার্ক ব্যাকবোন নেই। Link3 নামের এক ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে লাইন নিয়ে সিটিসেল আপাতত সেবা প্রদান করছে। ডিসের লাইনের ক্ষেত্রে যখন কেউ লাইন নিয়ে আবার লাইন প্রদান করে, তখন আমরা বলি ওরা ফিডের ব্যবসা করে। সিটিসেলও সেরকম ফিডের ব্যবসা করছে। 🙂

সত্যি কথা বলতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের কোনো বিকল্প নাই। আমাদের দেশে সবরকম সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সততা কম থাকায় গ্রহকরা ভালো সেবা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। তবে আমার মনে হয় আপাতত আইএসপিগুলির মোবাইল কোম্পানীদেরকে ভয় না পেলেও চলবে….